দেবলীনা,
ঘরে ফিরলেই তোমার যে ঘ্রাণটা পেতাম
ক'দিন হলো সে ঘ্রাণটা নেই!
তুমি আছো; তোমার লাল শাড়ি, নীল ব্লাউজ, খয়েরী রংয়ের অন্তর্বাস ঝুলে আছে বারান্দায়!
সব আমার চেনা, তোমাকেই শুধু অচেনা লাগছে!
একসাথে আছি!
একটাই শোবার ঘর, একটাই খাবার টেবিল, একই ছাদের নিচে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর, কাটিয়ে দিচ্ছি নিদ্রা এবং অনিদ্রা নিয়ে!
তুমি আছো বাহুতে! পাশের বালিশে! তৃপ্তিতে! অতৃপ্তিতে! সঙ্গমে!
তবু তুমি নেই কেন? কোথায় নেই? কতটুকু জায়গায় নেই?
চেনা মানুষ অচেনা হয়ে উঠলে তাকে আর নিজের মানুষ লাগেনা!
তোমার সাথে আমার দূরত্বটা ঠিক কোথায়? একই বিছানায় থেকেও ঠিক কতটুকু দূরত্ব হয় মানুষের?
বুকের উপর মাথা রাখলেও যে শূন্যস্থানটা রয়ে যায়, তা পূরন করতে হলে ঠিক কত'টা উপযুক্ত স্পর্শ প্রয়োজন হয়?
.
অনিমেষ,
কারন খুঁজতে এসেছো নাকি কৈফিয়ত চাচ্ছো?
তোমাকে এখন আমার আর প্রেমিক প্রেমিক লাগেনা!
তুমি আর দশটা স্বাভাবিক পুরুষের মতো দেখতে!
পার্থক্য শুধু, তোমার সামনে আমি নগ্ন হই; অন্য দশ জনের সামনে হইনা!
শুধু একই ঘর, একই বিছানা, পাশের বালিশে শোবার অধিকার পেতে পেতে মানুষ যখন মুখস্থ হয়ে যায়, তখন তাকে আর নিজের মানুষ লাগে না!
তুমি ঘরে ফিরো! পরিপাটি হও! বিছানায় আসো! যত্ন করে নগ্ন করে দাও!
সঙ্গমে লিপ্ত হও! আমাকে স্তুপ করে ফেলো হাতের মুঠোয়!
তোমার শিশ্নে লেগে থাকা তরল ধুয়ে, টেবিলে বসে কব্জি ডুবিয়ে ভাত খাও!
তোমার গলায় কাটা বিঁধে গেলে, আমার কষ্ট হয়!
তোমার ভাতের প্লেটে খাবার রয়ে গেলে, আমি অতৃপ্তিতে ভুগি!
তোমার শরীরটা দূর্বল লাগলে, আমি মাথায় জলপট্টি দিয়ে সারা রাত জেগে থাকি!
কই, কখনো তো জিজ্ঞেস করোনি " আমি রাতে খেয়েছি কিনা? আমার শরীর ভালো কিনা? আমার মন খারাপ কেন?"
একেবারে শরীরের কাছে আসা যায় সহজেই; হৃদয়ের কাছে আসতে হলে হৃদয় থাকতে হয়!
তোমার সমস্ত বুকের ভেতর কি শুধু হাড্ডি আর মাংস; হৃদপিন্ড নেই?
পুরুষ মানুষ কি শুধু শরীর ভালোবাসতেই কাছে আসে?
যতটুকু দূরত্ব বেড়ে চলে অবেলায়, এক সন্ধ্যার কাছে আসা তাকে ঘুচাতে পারেনা!
.
দেবলীনা,
তোমার বড্ড অভিমান জন্মেছে বুকে!
মানুষ পুরাতন হলে, ভালোবাসা টের পাওয়া যায়না! পুরাতন হওয়া মানে স্বাভাবিক হওয়া!
আমরা একটু একটু করে স্বাভাবিক হয়ে গেছি! মুগ্ধতা ব্যপারটা আসলে বেশিক্ষন থাকে না! থাকলেও তার চাকচিক্য অল্প অল্প করে কমতে শুরু করে!
তোমার নাকফুলের রংটা একটু ঘোলাটে হয়ে গেছে! প্রথম যখন কিনে এনেছিলাম, কেমন পূর্নিমা চাঁদের মতো দেখাচ্ছিলো!
ঘোলাটে হয়েছে বলেই কি এর মূল্য কমেছে একটুও?
সম্পর্কটা নতুন নাকফুলের মতোই! এর চাকচিক্য ম্লান হয়ে আসে; মূল্য কমে না!
তুমি বলেছো, শরীরের জন্যই কি কাছে আসি?
শরীরকে বাদ দিয়ে দিলে, তুমি কি কাছে আসবে?
তোমার চোখ সুন্দর বলে তাকিয়ে থাকবো অনন্ত কাল, কিন্তু ছোব না তোমাকে!
তুমি থাকবেনা সাথে! একদিন হারাবে! পালিয়ে যাবে! বিরক্ত হবে! অসহ্য লাগবে!
শুধু হৃদপিন্ডের প্রেমেও ঘর টিকেনা, দেবী!
.
অনিমেষ,
মাঝে মাঝে বড্ড বাচ্চাদের মতো কথা বলো তুমি! মুগ্ধতা এবং সঙ্গমের বাইরে যে দায়িত্বের ব্যপারগুলো থাকে, তা ঠিকঠাক করতে না পারলে, নৈকট্য থাকেনা!
সঙ্গম একটা অভ্যাস!
তোমার শর্ট টাইম অথবা লং টাইম ডিউরেশনাল সঙ্গমে আমি নিজেকে এডজাস্ট করে সুখি হতে পারি!
কিন্তু তোমার অযত্ন, অমনোযোগ আর অবহেলার সাথে এডজাস্ট করতে পারিনা!
একসাথে টিকে থাকার যুদ্ধটা একসাথেই করতে হয়!
একা একা একসাথের যুদ্ধটায় জয়ী হওয়া যায়না!
ওসব তুমি বুঝবেনা! অতটুকুই যদি টের পেতে, তবে কি আর একসাথে লেপ্টে থাকা সময়ের মাঝখানেও একটা শূন্যতার আকাশ জন্মাতে পারে?
তোমার সাথে হয়তো এই এক জীবন রয়ে যাবো আমি! একই ঘরে! একই বিছানায়! একই বালিশে!
আসলেই কি রয়ে যাবো সাথে?
একটুও কি হারাবো না নিজের কাছ থেকে নিজে?
অভ্যাস!
- Asaduzzaman Jibon

Comments

Popular posts from this blog