''শেষবার হাত ছেড়ে চলে আসার সময় মাধবীলতা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অনিরুদ্ধর দিকে!
যেন চোখের পলক ফেললেই অনিরুদ্ধ বাতাসের সাথে মিশে যাবে!
একটু পর; খুব সম্ভবত আর কয়েক মিনিট পর থেকেই দুটো মানুষ ভিন্ন ভিন্ন গন্তব্যের পথে যাত্রা শুরু করবে!
দুজন মানুষ আলাদা আলাদা পথে হেটে গেলেও একদিন দেখা হয়ে যাবে পথে! পৃথিবীটা তো গোল! মাধবীলতা এটা বিশ্বাস করতে পারছেনা।
এই মুহূর্তে তার কাছে মনে হচ্ছে পৃথিবীটা একটা সপ্তভূজ! সেই সপ্তভূজে একটা গোলকধাঁধা ঘুরপাক খেয়ে এলোমেলো হয়ে আছে! এখানে একবার দুজন মানুষ দুদিকে হেটে গেলে আর কখনো দেখা হবেনা!''
যেন চোখের পলক ফেললেই অনিরুদ্ধ বাতাসের সাথে মিশে যাবে!
একটু পর; খুব সম্ভবত আর কয়েক মিনিট পর থেকেই দুটো মানুষ ভিন্ন ভিন্ন গন্তব্যের পথে যাত্রা শুরু করবে!
দুজন মানুষ আলাদা আলাদা পথে হেটে গেলেও একদিন দেখা হয়ে যাবে পথে! পৃথিবীটা তো গোল! মাধবীলতা এটা বিশ্বাস করতে পারছেনা।
এই মুহূর্তে তার কাছে মনে হচ্ছে পৃথিবীটা একটা সপ্তভূজ! সেই সপ্তভূজে একটা গোলকধাঁধা ঘুরপাক খেয়ে এলোমেলো হয়ে আছে! এখানে একবার দুজন মানুষ দুদিকে হেটে গেলে আর কখনো দেখা হবেনা!''
অনিরুদ্ধ যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়, তখন তার বয়স কেবল ১৮ পেরিয়েছে! মাধবীলতাও সেই একই বছর একই ডিপার্টমেন্টে ভর্তি হয়েছিলো!
সেখান থেকেই অনিরুদ্ধ আর মাধবীলতার পরিচয়!
পরিচয় থেকে বন্ধু! বন্ধু থেকে বেস্ট ফ্রেন্ড! বেস্ট ফ্রেন্ড থেকে কখন তারা একজন অন্যজনকে ভালোবেসেছিলো, সেটা বুঝে উঠতে পারেনি! দিন যায়, দুজন মানুষের নৈকট্য বেড়ে চলে!
এক সাথে পাশের বেঞ্চে বসে থাকা! একসাথে বাড়ি ফেরা! ক্লাস মিস দেওয়া! একটা মাত্র ছাতার নিচে দুজন মানুষ ঘাপটি দিয়ে বসে থাকা। ছাতার বেশিরভাগ অংশটা মাধবীলতার দিকে ধরে রেখে অর্ধেক অনিরুদ্ধ ভিজে যায়, শুকনো রয়ে যায় বাকি অর্ধেক!
এই খুনশুটি! রাত জেগে ফোনে কথা বলা! কল্পনায় কাছে যাওয়া! একসাথে হেটে চলা মাইলের পর মাইল! আঙুলের স্পর্শ!
দুজন মানুষ ভাবতে শুরু করে, পৃথিবীটা এত সুন্দর কেন!
সেখান থেকেই অনিরুদ্ধ আর মাধবীলতার পরিচয়!
পরিচয় থেকে বন্ধু! বন্ধু থেকে বেস্ট ফ্রেন্ড! বেস্ট ফ্রেন্ড থেকে কখন তারা একজন অন্যজনকে ভালোবেসেছিলো, সেটা বুঝে উঠতে পারেনি! দিন যায়, দুজন মানুষের নৈকট্য বেড়ে চলে!
এক সাথে পাশের বেঞ্চে বসে থাকা! একসাথে বাড়ি ফেরা! ক্লাস মিস দেওয়া! একটা মাত্র ছাতার নিচে দুজন মানুষ ঘাপটি দিয়ে বসে থাকা। ছাতার বেশিরভাগ অংশটা মাধবীলতার দিকে ধরে রেখে অর্ধেক অনিরুদ্ধ ভিজে যায়, শুকনো রয়ে যায় বাকি অর্ধেক!
এই খুনশুটি! রাত জেগে ফোনে কথা বলা! কল্পনায় কাছে যাওয়া! একসাথে হেটে চলা মাইলের পর মাইল! আঙুলের স্পর্শ!
দুজন মানুষ ভাবতে শুরু করে, পৃথিবীটা এত সুন্দর কেন!
দেখতে দেখতে ৪ বছর চলে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডি পেরিয়ে দুজনকেই নামতে হবে জীবনের পথে! অনিরুদ্ধর বাবা মারা গেছেন প্রায় ১ বছর হলো। পরিবারে মা আর একটা ছোটবোন!
সংসার সামলানোর দায়িত্বটা হুট করেই অনিরুদ্ধর মাথার উপর চলে আসছে! দায়িত্ব ব্যপারটাই এমন; নিতে ইচ্ছে না হলেও নিতে হয়!
একটা ছোট চাকরির জন্য অনিরুদ্ধ ঘুরে বেরাতে শুরু করে এই অফিস থেকে ওই অফিস! হবে হবে করেও একটা চাকরি মিলে না!
অবশেষে একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি হয় অনিরুদ্ধর!
পদ; কম্পিউটার অপারেটর! বেতন ৮৭৫০ টাকা সর্বসাকুল্যে!
আপাতত, এই চাকরিটা দিয়েই শুরু করতে হবে! টানাটানির সংসারে যেটুকু সাপোর্ট দেওয়া যায়! অনিরুদ্ধ চাকরিতে জয়েন করলো! অফিসের সমস্ত কাজ যেন তারই করতে হয়! এই চিঠি ওই চিঠি লিখতে লিখতে সময় যায়।
হিসাব থেকে শুরু করে নোটিশ বোর্ডে লাগানো কাগজটা পর্যন্ত টাইপ করতে হয় তার!
সংসার সামলানোর দায়িত্বটা হুট করেই অনিরুদ্ধর মাথার উপর চলে আসছে! দায়িত্ব ব্যপারটাই এমন; নিতে ইচ্ছে না হলেও নিতে হয়!
একটা ছোট চাকরির জন্য অনিরুদ্ধ ঘুরে বেরাতে শুরু করে এই অফিস থেকে ওই অফিস! হবে হবে করেও একটা চাকরি মিলে না!
অবশেষে একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি হয় অনিরুদ্ধর!
পদ; কম্পিউটার অপারেটর! বেতন ৮৭৫০ টাকা সর্বসাকুল্যে!
আপাতত, এই চাকরিটা দিয়েই শুরু করতে হবে! টানাটানির সংসারে যেটুকু সাপোর্ট দেওয়া যায়! অনিরুদ্ধ চাকরিতে জয়েন করলো! অফিসের সমস্ত কাজ যেন তারই করতে হয়! এই চিঠি ওই চিঠি লিখতে লিখতে সময় যায়।
হিসাব থেকে শুরু করে নোটিশ বোর্ডে লাগানো কাগজটা পর্যন্ত টাইপ করতে হয় তার!
আজকাল মাধবীলতার সাথে তেমন কথা হয়না! সারাদিনে কাজের ফাঁকে দুমিনিট কথা বলেই ফোন রেখে দিতে হয়।
সন্ধ্যায় ঘরে ফিরে শরীর এত'টা ক্লান্ত লাগে যে, ফোনে কারো ভালোবাসার শব্দ শুনতেও ইচ্ছে হয়না।
ঘরে তৈল আছে তো লবন নেই, লবন আছে তো চাল নেই! এ যেন এক মেশিনারিজ প্যাচ! কিভাবে কি করা যায়, এই দুঃশ্চিন্তায় অনিরুদ্ধর ঘুম হয়না ঠিকঠাক!
একটা সংসার সামলানো যেন তেন ব্যপারনা!
প্রয়োজন যেন পিছু ছাড়ছেনা কখনোই।
সন্ধ্যায় ঘরে ফিরে শরীর এত'টা ক্লান্ত লাগে যে, ফোনে কারো ভালোবাসার শব্দ শুনতেও ইচ্ছে হয়না।
ঘরে তৈল আছে তো লবন নেই, লবন আছে তো চাল নেই! এ যেন এক মেশিনারিজ প্যাচ! কিভাবে কি করা যায়, এই দুঃশ্চিন্তায় অনিরুদ্ধর ঘুম হয়না ঠিকঠাক!
একটা সংসার সামলানো যেন তেন ব্যপারনা!
প্রয়োজন যেন পিছু ছাড়ছেনা কখনোই।
মাধবীলতা অভিমান করে বসে আছে। এত'টা ব্যস্ত আসলে কেউ থাকেনা! অনিরুদ্ধ চাইলেই একটু খোঁজ হয়তো নিতে পারে!
এই অবহেলা সহ্য করা কঠিন। যে মানুষ সারাদিনে শতবার খোঁজ নিতো,যে মানুষ রাতে ঘুমাতে দিতো না, সেই মানুষটা আজকাল ঘুম পাচ্ছে অজুহাতে দূরত্ব বাড়িয়ে দিচ্ছে!
মাধবীলতার অভিমান জমতে জমতে যেন আকাশ ছুয়ে ফেলছে!
এভাবে হয়না!
এভাবে হয়না হয়না করে করেও মাধবীলতা ছেড়ে যেতে পারেনা৷ যাকে ভালোবাসে, তাকে ছেড়ে চলে যাওয়া সহজ কিছু না।
ভালোবাসার মানুষের প্রতি অভিমান করে ছেড়ে যাওয়া গেলে, ওটা ভালোবাসা হয়নি কখনো।
এই অবহেলা সহ্য করা কঠিন। যে মানুষ সারাদিনে শতবার খোঁজ নিতো,যে মানুষ রাতে ঘুমাতে দিতো না, সেই মানুষটা আজকাল ঘুম পাচ্ছে অজুহাতে দূরত্ব বাড়িয়ে দিচ্ছে!
মাধবীলতার অভিমান জমতে জমতে যেন আকাশ ছুয়ে ফেলছে!
এভাবে হয়না!
এভাবে হয়না হয়না করে করেও মাধবীলতা ছেড়ে যেতে পারেনা৷ যাকে ভালোবাসে, তাকে ছেড়ে চলে যাওয়া সহজ কিছু না।
ভালোবাসার মানুষের প্রতি অভিমান করে ছেড়ে যাওয়া গেলে, ওটা ভালোবাসা হয়নি কখনো।
এভাবে ১ টা বছর কেটে গেছে! অনিরুদ্ধ তার ছোট বোনের স্কুলের বেতনটা দেওয়ার জন্য কোন উপায় না পেয়ে নিজের মোবাইল ফোনটা বিক্রি করে দেয়!
আজ সকাল থেকে মাধবীলতা কয়েক হাজারবার অনিরুদ্ধের ফোনে কল দেওয়ার চেষ্টা করেছে। ফোনটা সকাল থেকেই বন্ধ!
সকাল, বিকাল, রাত কেটে যায়। কাটে সপ্তাহ, মাস!
মাধবীলতার বুকের ভেতর একজন প্রেমিক অনিরুদ্ধ প্রতারক হয়ে উঠে!
সকাল, বিকাল, রাত কেটে যায়। কাটে সপ্তাহ, মাস!
মাধবীলতার বুকের ভেতর একজন প্রেমিক অনিরুদ্ধ প্রতারক হয়ে উঠে!
সামনের মাসের ৩ তারিখ মাধবীলতার বিয়ে। বর কানাডা ফেরত বড়লোকের ছেলে। পরিবার একরকম জোর করেই তাকে বিয়েতে রাজী করায়!
অনিরুদ্ধকে ছাড়া একটা জীবন কাটিয়ে দিতে হবে, এই চিন্তাটা মাধবীলতাকে শান্তি দিচ্ছেনা!
অনিরুদ্ধকে ছাড়া একটা জীবন কাটিয়ে দিতে হবে, এই চিন্তাটা মাধবীলতাকে শান্তি দিচ্ছেনা!
আজ দুপুরে অনিরুদ্ধর কল এসেছে। মাধবীলতা হ্যালো বলেই কান্না শুরু করে দেয়!
অনেকদিন পর খুব পরিচিত কন্ঠস্বর শুনলে বুকের ভেতরের শূন্যতা বেড়ে উঠে!
তাদের দুজনের কথা শুরু হয়,
অনেকদিন পর খুব পরিচিত কন্ঠস্বর শুনলে বুকের ভেতরের শূন্যতা বেড়ে উঠে!
তাদের দুজনের কথা শুরু হয়,
- এতদিন কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলে, অনিরুদ্ধ?
- ছোটবোনের স্কুলের বেতন দেওয়ার জন্য ফোনটা বিক্রি করে দিয়েছি।
- অন্য কারো নাম্বার থেকে কল দিয়ে এটা আমাকে জানাতে পারতে।
- ইচ্ছে করেই জানাইনি।
- কেন?
- তুমি যাতে সহ্য করতে শিখে যাও। আমি চাইনা, তুমি আমার জীবনে থাকো! এই টানাটানির সংসারের চাপটা তুমি নিতে পারবেনা। যখন ফোনটা বিক্রি করে দিয়েছিলাম; তখনই মনে হলো, আমাদের আর যোগাযোগ না হোক!
- তুমি কি আমাকে ছেড়ে দিতে চাইছো?
- ধরে রাখতে পারছিনা আর, লতা!
- আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে। ছেলে কানাডায় পড়াশুনা করেছে। এখন দেশে এসে একটা বড় কোম্পানিতে চাকরি করছে।
- ওহ, স্বাগতম! তোমার ভবিষ্যত জীবনের জন্য শুভ কামনা! ভালো থেকো!
কল কেটে দিয়ে ফোনের দুপাশে দুজনই কান্না করছে!
অনিরুদ্ধ টের পাচ্ছে, ছেড়ে দিতে চাওয়ার ইচ্ছে আর মানুষের চলে যাওয়ার কষ্টটা একই রকম না।
মুখে ছেড়ে দিবো বলে দেওয়া সহজ, তবে যে মানুষ অস্তিত্বের সাথে মিশে গেছে, তাকে সত্যি সত্যি ছেড়ে চলে আসা ভীষন কঠিন।
অনিরুদ্ধ টের পাচ্ছে, ছেড়ে দিতে চাওয়ার ইচ্ছে আর মানুষের চলে যাওয়ার কষ্টটা একই রকম না।
মুখে ছেড়ে দিবো বলে দেওয়া সহজ, তবে যে মানুষ অস্তিত্বের সাথে মিশে গেছে, তাকে সত্যি সত্যি ছেড়ে চলে আসা ভীষন কঠিন।
অনিরুদ্ধ পাগলের মতো হয়ে যাচ্ছে। সব কেমন এলোমেলো হয়ে গেছে।
যে জীবনে লতা নেই, সে জীবন নিঃসঙ্গ নদীর মতো। ধূধূ মরুভূমির মতো! ক্লান্ত পথিকের এলিয়ে যাওয়া শরীরের মতো নিথর!
যে জীবনে লতা নেই, সে জীবন নিঃসঙ্গ নদীর মতো। ধূধূ মরুভূমির মতো! ক্লান্ত পথিকের এলিয়ে যাওয়া শরীরের মতো নিথর!
আর এক সপ্তাহ পর মাধবীলতার বিয়ে। আজ অনিরুদ্ধের সাথে মাধবীলতার দেখা হবে। দেখা করার জায়গা ঠিক হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাতে। যেখানে প্রথমবার তারা হাত ধরে বসেছিলো, আজও সেখানেই তাদের দেখা হবে!
অনিরুদ্ধ বসে আছে, মাধবীলতা হেটে হেটে অনিরুদ্ধের দিকে আসছে।
অনিরুদ্ধ এর আগে এত মায়াবী কোন নারীর মুখ দেখেনি। চোখে মুখে যেন স্রষ্টা প্রদত্ত এক স্বর্গীয় মায়ায় তার মুখটা জ্বলজ্বল করছে!
অনিরুদ্ধ বসে আছে, মাধবীলতা হেটে হেটে অনিরুদ্ধের দিকে আসছে।
অনিরুদ্ধ এর আগে এত মায়াবী কোন নারীর মুখ দেখেনি। চোখে মুখে যেন স্রষ্টা প্রদত্ত এক স্বর্গীয় মায়ায় তার মুখটা জ্বলজ্বল করছে!
প্রথমদিনের মতো আজও তারা একজন অন্যজনের হাত ধরে বসেছে। যেন, হাত ছেড়ে দিলেই অন্য কেউ নিয়ে যাবে।
বিদায় দেওয়াটা পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন কাজগুলোর মধ্যে একটি।
কাছে আসার চেয়ে দূরে যাওয়া কঠিন। হুটহাট হাত ধরে ফেলা যায়, হুটহাট হাত ছেড়ে দিয়ে চলে আসা যায়না!
শেষবারের মতো তারা হাত ধরে বসে আছে। মাধবীলতার চোখ দিয়ে টপটপ করে জল পড়ছে। লতা তার ভেজা চোখ নিয়ে অনিরুদ্ধের দিকে তাকিয়ে শেষবারের মতো বললো-
বিদায় দেওয়াটা পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন কাজগুলোর মধ্যে একটি।
কাছে আসার চেয়ে দূরে যাওয়া কঠিন। হুটহাট হাত ধরে ফেলা যায়, হুটহাট হাত ছেড়ে দিয়ে চলে আসা যায়না!
শেষবারের মতো তারা হাত ধরে বসে আছে। মাধবীলতার চোখ দিয়ে টপটপ করে জল পড়ছে। লতা তার ভেজা চোখ নিয়ে অনিরুদ্ধের দিকে তাকিয়ে শেষবারের মতো বললো-
" আমাদের আর কখনো দেখা হবেনা, নাহ?"
Comments
Post a Comment