জীবনকে যে সহজ ভাবে নিতে পারেনা, তার কতই না হতাশা! কতই না আফসোস! কতই না মন খারাপ হয়ে থাকে অসংখ্য মুহূর্ত! কত'টা নিঃসঙ্গতা অনুভব করে দিনের পর দিন, রাতের পর রাত!
আমি সবসময় আমার জীবনকে সহজ ভাবে দেখি। যদিও জীবন সরলরেখার মতো হয়না, যদিও সমস্ত আয়ুস্কালের মধ্য দিয়ে বয়ে যায় বেহিসেবি বন্ধুর পথ। যদিও হাটতে হাটতে হোঁচট খেতে হয় পথে। আমি হোঁচট খেয়ে উঠে দাঁড়িয়ে আবার হাটতে থাকি। উচু নিচু বন্ধুর পথের উপর দোষ চাপিয়ে নিজেকে দায়মুক্ত করার আগে আমি আমার দৃষ্টিকে দোষারোপ করি। আমার তাকানোতেই সমস্যা, নতুবা হোঁচট খেতাম না। আমার দেখার ক্ষমতা দূর্বল বলেই আমি জীবনকে ঝাপসা দেখি মাঝে মাঝে। দোষটা জীবনের না, যেটুকু উচু নিচু পথে আমি হেটে যাই অসতর্কতায়, সেটুকু দোষ তো আমার একান্তই ব্যক্তিগত।
জীবনকে সহজ ভাবে নিতে হলে, কঠিনের মুখোমুখি হতে হয়। যেমন মানুষ ভুল মানুষের সাথে পরিচয় হওয়ার পর সঠিক মানুষ চিনতে শুরু করে। জীবনে বড় হতে হলে ছোট থেকে শুরু করতে হয়। অর্জন করতে হলে বর্জন করা শিখতে হয়।
ম্যাচিউর হতে হলে, ইম্যাচিউরিটির ছোট বড় ধকল সয়ে আসতে হয়।
যারা জীবনকে সহজ ভাবে নিতে পারেনা, তারা কত'টা অসহায়ত্ব নিয়েই না বেঁচে থাকে। নিজেকে স্ট্রং করতে হলে, বোকামির জন্য ধরা খেয়ে আসতে হয়।
মানুষ তখন থেকে জীবনকে সহজ ভাবতে শুরু করে, যখন থেকে সে মানসিক ভাবে বড় হয়ে যায়। বয়স বাড়লেই তো মানুষ বড় হয়না। বড় হওয়ার জন্য চিন্তার গভীরতাকে প্রসারিত হতে দিতে হয়। মানসিক ভাবে বড় হতে হলে, ঠকতে হয়! হারাতে হয়! কাঁদতে হয়! মরে যেতে যেতে বাঁচতে হয়!
জীবন তখনই সহজ হয়ে যায়, যখন জীবনের প্রতি মানুষের প্রত্যাশা কমতে থাকে। শুধু জীবন নয়, বেঁচে থাকার সমস্ত ধাপেই এক্সপেক্টেশনের মুখে লাগাম দিতে হয়।
এই পাগলা ঘোড়ার নিয়ন্ত্রন নিজের হাতে না থাকলে, জীবন জটিল হয়ে উঠে। আমাদের সম্পর্কের যত আলাদা হওয়ার গল্প আছে, তার অধিকাংশই দূরত্বের ফল বয়ে এনেছে এক্সপেক্টেশনের অপূর্ণতার কারনে।
আমার জীবন সহজ। চোখের সামনে দিয়ে প্রিয়জন দূরে চলে গেছে প্রয়োজনে। আমি তাকিয়ে দেখতে দেখতে বড় হয়ে যাই। সবাই যাকে প্রতারক বলে, আমি তার দিকে তাকিয়ে সহজ সহজ দৃষ্টি নিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বলি, চলে যাওয়াটাই তো স্বাভাবিক। মানুষ জীবনে রয়ে গেলেই বরং সব অস্বাভাবিক লাগে। মানুষ তার ব্যক্তিগত প্রয়োজনে কাছে আসে, ব্যক্তিগত প্রয়োজনে তো চলে যাওয়ার অধিকারও তার আছে। আমি বরং কারো চলে যাওয়াতে ভাবি, মানুষটা ছিল এটার মতো করে মানুষটা আর নেই; দুটোই তো স্বাভাবিক ঘটনা। এই মানুষটা তো এমনিতেও একসময় জীবনে ছিল না। জগতের সমস্ত সৃষ্টিই যা থেকে শুরু হয়, তা হয়েই শেষ হয়। মানুষ যেমন মাটি দিয়ে তৈরী হয়, মাটি হয়েই তো মিশে যায়। অপরিচিত মানুষটা আবার একসময় অপরিচিতর মতোই হয়ে যাবে, এটা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়।
জীবনকে সহজ ভাবে একবার নিয়ে নিলেই জীবন সহজ হয়ে যায়।
হতাশা, বিষন্নতা, অনিদ্রা, ডিপ্রেশন, অপূর্ণতা, অপ্রাপ্তি, বিশ্বাসঘাতকতা এসব নিয়েই জীবন। এসব ছাড়া কখনো জীবন হয়না। পেন্সিলের মতো ভঙ্গুর হলে টুকরো হতে হয়, আমি বরং কলমের মতো হই। ভেতরের কালিটুকু ফুরালেও অবয়বটা আগের মতোই যাতে রয়ে যায়।
সামান্য জীবনের ঝড়ে কেপে উঠলেই সবকিছু ভেঙে যায়না, কেউ কেউ দাঁড়িয়ে থাকে সমস্ত ঝড় শেষেও মাথা উচু করে।
জীবনে জটিলতা থাকেই, সেসব জটিলতার দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে ডিপজলের সেই ডায়লগটা দিয়ে দিই " আহো ভাতিজা, আহো! হাহাহা!''
জটিলতাকে জটিল করতে নেই, জটিলতাকে স্বাভাবিক ভাবতে শিখতে হয়।
একাকিত্ব নিঃসঙ্গতার গল্প কার জীবনে নেই? বিশ্বাসঘাতকের সাথে কার দেখা হয়নি? আঙুল ছেড়ে যাওয়া মানুষ নিয়ে কে বিষন্ন হয়নি? কাকে কোন পুরাতন স্মৃতি পোড়ায় না?
একটু খোঁজ নিলেই দেখবে, প্রতিটা মানুষ কত'টা ব্যথা সয়ে সয়ে বড় হয়ে যায়।
জীবনকে জটিল ভাবতে নেই। একটা সরল অংকের মতো জীবনের সমস্ত অসংগতির সমাপ্তি আস্তে আস্তে ছোট হয়ে আসে।
ওসব হিসেব নিকেশ করে কি হবে। আমি বরং ভাবতে থাকি, " টানা ১ মিনিট চুমু খেলে, একজন মানুষের শরীরে ২৬ ক্যালরি বার্ন হয়! ভাভারে ভাভা!"
ডিয়ার ডিপ্রেশড ফ্রেন্ডস, প্লিজ এনজয় ইউর এভরি ব্রেথ!

Comments

Popular posts from this blog