- আচ্ছা নীরা, আমাদের যদি বিয়েটা শেষ পর্যন্ত না হয়?
- এখনই তার প্ল্যান করে রাখতে হবে?
- প্ল্যান না ঠিক, এমনি জানতে ইচ্ছে হলো।
- বিয়ে না হলে না হবে!
- তোমার কষ্ট হবেনা?
- কষ্ট কেন হবে? আমি তো টাইম পাশ করতেছি তোমার সাথে, তাই না?
- রেগে যাচ্ছো কেন?
- তাহলে কি মধুর স্বরে বলবো "ইশ, যদি বিয়েটা না হয় তাহলে যে কি মজা হবে!"
- আমি ফান করছিনা নীরা!
- এখানে সিরিয়াসনেশের কি এমন আছে?
- অনেক কিছুই আছে।
- কিছুই নেই!
- যে চাকরিটা হওয়ার কথা ছিল, সেখান থেকে আজকে ফোন দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে যে চাকরিটা তারা আমাকে দিতে পারছেনা। তাদের কোম্পানির চেয়ারম্যানের এক দূরসম্পর্কের আত্মীয়কে সেই পোস্টে বসানো হয়েছে।
- তাহলে?
- তাহলে কিছুই না। তোমার বাবা যে ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক করতে চাচ্ছে, তাকেই বিয়ে করতে হবে। আমি আমার নিজের উপর খুবই হতাশ। এভাবে লাইফটাকে নিজের ইচ্ছাতে সেটেলড করা যায়না, নীরা!
- এই শেষ সুযোগটাও তাহলে আমাদের পক্ষে হলো না?
- পৃথিবী সবাইকে সবকিছু দিতে ভালোবাসেনা। পৃথিবীর নিয়মটাই এমন যে, একজনের চাওয়ার জিনিস আরেকজনকে দিয়ে দিবে!
- তাই বলে, তুমি থাকবেনা জীবনে?
- থাকবো!
- কিভাবে?
- একদিন বুঝে যাবে!
- আমি বিয়েটা করবোনা, হিমু!
- কেন করবেনা? ছেলেটা তো ভালো। দ্যাখতে কি সুন্দর। মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির সিনিয়র এক্সিকিউটিভ। ভালো টাকা মাইনে পায়। কর্পোরেটে এমন সাকসেসফুল ছেলে তো খুব কমই পাওয়া যায়। মা-বাবা মেয়ের জন্য যেমন ছেলে পছন্দ করে, এই ছেলেটা তার সব রিকয়ারমেন্টই ফুলফিল করেছে।
- টাকা দিয়ে কি হবে?
- টাকা ছাড়াও তো কিছু হয়না!
- দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে বেঁচে থাকবো। ভালোবেসে বেঁচে থাকবো। জড়িয়ে বেঁচে থাকবো।
- দু বেলা সম্ভব। তৃতীয় বেলায় ওসবে মানুষ বাঁচেনা।
- তারমানে তুমি বলতে চাচ্ছো, আমি ওই ছেলেকে বিয়ে করে সংসার করা শুরু করবো?
- এটাই কি ভালো হবেনা?
- ভালো খারাপটা শেখাতে এসো না। যেটা ভালো হবে, সেটা তুমি করছো না।
- করতে পারছিনা। শুধু ভালোবাসা দিয়ে জীবন কাটেনা।
- ভালোবাসা ছাড়া খুউব কেটে যায়, নাহ?
- চলে যায় দিন।
- না যাওয়ার মতোই।
- নীরা, ছেলেমানুষী করো না। এটা একটা সম্পূর্ন জীবনের ব্যপার!
- হ্যা। আচ্ছা, আমাদের সংসারটাকে টেনে নিতে খুব বেশি কিছু না হলে হবেনা? এই ধরো দুটো টিউশনি করে কাটালাম। আমি তো একটা ছোট্ট চাকরি করছিই, তাতেই টেনেটুনে চলে যাবে।
- এভাবে হয়না। তোমার সামনে সুন্দর ভবিষ্যত হামাগুরি খাচ্ছে৷ তাকে স্পর্শ করো।
- তুমি কি থাকতে চাইছোনা?
- তোমার সুখ চাই।
- তাহলে রয়ে যাওনা সাথে! তোমাকে ছাড়া বাঁচতে খুব কষ্ট হয়ে যাবে। তোমার জায়গাটা তো আর কাউকে দিতে পারবোনা, হিমু!
- কারো জায়গায় কেউ বসেনা কখনো। সবাই যার যার জায়গা বানিয়ে নেয়! ঘরে ফিরে যাও, নীরা!
- তোমাকে ভুলে যেতে বলবেনা?
- নাহ!
- ভুলে যাবো!
- যাবে হয়তো একদিন!
- আরেকটু চেষ্টা করে দ্যাখো, জীবন বদলে যায় মুহূর্তেই। আমি থাকবোনা, তুমি ভালো থেকো!
- হ্যা, ভালো থাকবো!
- আর কখনো আমাদের দেখা হবেনা, নাহ?
- পৃথিবীটা তো ছোট্ট! দেখা হয়ে যায় অপ্রয়োজনে!
- শেষবার হাতটা ছুয়ে দেখি?
- মায়া বাড়াতে নেই!
হিমু চলে যাচ্ছে! নীরাও চলছে অজানা ভবিষ্যতের দিকে!
চলে যাওয়ার সময় কেউই কারো দিকে তাকাচ্ছেনা। চলে যাওয়ার সময় কাছের মানুষের চোখের দিকে তাকানো যায়না। তাকালে টুপ করে চোখ থেকে জল পরে যায়।
তবুও, হিমু হেটে যেতে যেতে হাতের উল্টাপাশ দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে ছেড়ে গ্যালো জলজ্যান্ত একটা কল্পনার সংসার। সম্পর্ক তো সংসারের মতোই। সম্পর্ক নিজের সন্তানের মতো। একটু একটু করে লালন পালন করে তাকে বড় করতে হয়। নিজ হাতে গড়ে তোলা সন্তানের মৃত্যুতে যেমন মানুষ নিজেকে সামলাতে পারেনা, তেমনি সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার এই সাময়িক ব্যথাটা সামলিয়ে উঠাও সহজ নয়।
চলে যাওয়ার সময় কেউই কারো দিকে তাকাচ্ছেনা। চলে যাওয়ার সময় কাছের মানুষের চোখের দিকে তাকানো যায়না। তাকালে টুপ করে চোখ থেকে জল পরে যায়।
তবুও, হিমু হেটে যেতে যেতে হাতের উল্টাপাশ দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে ছেড়ে গ্যালো জলজ্যান্ত একটা কল্পনার সংসার। সম্পর্ক তো সংসারের মতোই। সম্পর্ক নিজের সন্তানের মতো। একটু একটু করে লালন পালন করে তাকে বড় করতে হয়। নিজ হাতে গড়ে তোলা সন্তানের মৃত্যুতে যেমন মানুষ নিজেকে সামলাতে পারেনা, তেমনি সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার এই সাময়িক ব্যথাটা সামলিয়ে উঠাও সহজ নয়।
অনেক বছর পর, নীরার সাথে দেখা হয়ে গ্যালো। তার সাথে একটি ফুটফুটে বাচ্চা মেয়ে। দেখতে একদম মায়ের মতোই হয়েছে। বোচা বোচা নাক, আঁকা বাকা দাঁত। একদম ক্লোন কপি।
হিমু নীরার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলতে পারছেনা। কেমন যেন সেই প্রথমদিনের মতো হাটু কাপছে। নাকের উপর চিকন ঘামের বিন্দু ফুটে উঠছে। মেরুদন্ড বেয়ে নেমে যাচ্ছে একটা শিতল স্রোত।
কি বলবে বুঝতে পারছেনা কেউই। নীরাই, প্রথম কথা বললো- কেমন আছো, হিমু?
হিমু নীরার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলতে পারছেনা। কেমন যেন সেই প্রথমদিনের মতো হাটু কাপছে। নাকের উপর চিকন ঘামের বিন্দু ফুটে উঠছে। মেরুদন্ড বেয়ে নেমে যাচ্ছে একটা শিতল স্রোত।
কি বলবে বুঝতে পারছেনা কেউই। নীরাই, প্রথম কথা বললো- কেমন আছো, হিমু?
- হ্যা ভালো! তুমি?
- যেমন চেয়েছিলে!
- তাহলে তো বেশ ভালো আছো!
- আছি হয়তো!
- এটা, তোমার সন্তান?
- হ্যা!
- কি নাম ওর?
- হিমাদ্রি!
- বাহ, বেশ সুন্দর নাম!
- হ্যা!
- সংসার কেমন চলছে?
- তুমিই তো বলেছিলে, সময় সবকিছু বদলে দেয়! চলছে সংসার ভালোই।
- আচ্ছা।
- কাজ আছে? বিজি তুমি?
- হ্যা, ১২ টায় একটা চাকরির ইন্টারভিউ আছে! দোয়া করো!
- তাহলে তো আর তোমাকে আটকানো যাবেনা।
- ঠিক সময়ে পৌছাতে হবে।
- সাবধানে যেও। আর একদম টেনশন করো না, আশা করি এবার ভালো কিছুই হবে।
- হবে হয়তো।
- ভালো থেকো।
- চেষ্টা করবো।
হিমু এবং নীরা দ্বিতীয়বারের মতো চলে গ্যালো। হিমুর হাতে একটা ইন্টারভিউয়ের ফাইল। নীরার হাতে হিমাদ্রির হাত। দুজন মানুষ আবার দুদিকে চলে যাচ্ছে।
চলে যাওয়ার সময় কেউই কারো দিকে তাকাচ্ছেনা। খুব কাছের মানুষের চলে যাওয়ার সময় তার দিকে তাকানো যায়না। তাকালেই টুপ করে চোখ থেকে জল পরে যায়।
হিমু দ্বিতীয়বারের মতন, তার হাতের উল্টাপাশ দিয়ে চোখ মুছে নিল। এত'টা যত্ন করে লুকিয়ে চোখ মুছলো, যাতে নীরা দেখে না ফেলে।
চলে যাওয়ার সময় কেউই কারো দিকে তাকাচ্ছেনা। খুব কাছের মানুষের চলে যাওয়ার সময় তার দিকে তাকানো যায়না। তাকালেই টুপ করে চোখ থেকে জল পরে যায়।
হিমু দ্বিতীয়বারের মতন, তার হাতের উল্টাপাশ দিয়ে চোখ মুছে নিল। এত'টা যত্ন করে লুকিয়ে চোখ মুছলো, যাতে নীরা দেখে না ফেলে।
Comments
Post a Comment