তোমাকে ভালোবাসতে বাসতে ভুলে গেছি, শেষ কবে নিজেকে ভালোবেসেছিলাম।
এখন আমার ঠিক সময়ে ঘুমাতে হয়। নিয়ম করে খাবার খেতে হয়। একটু গাঁ গরম হলে, জ্বরের ঔষুধ খেতে হয়।
সন্ধ্যা হলেই ঘরে ফেরার তাড়া থাকে। শুধু কি তাই, এখন আমি রোজ রোজ যত্ন নিই তোমার।
এখন তুমি নীল শাড়ি, নীল রংয়ের টিপ, নেভি ব্লু রংয়ের চুড়ি পরে সামনে দাঁড়ালে আমার বলতে হয়, "আচ্ছা, তুমি এত আকাশ আকাশ রূপবতী কেন?"
তোমাকে ভালোবাসতে বাসতে আমি অভিনয় শিখে গেছি।
মুগ্ধ না হলেও সম্পর্কের দায়বদ্ধতা থেকে বলতে হয়, "তুমি এত্ত বিশ্রী রকমের সুন্দর কেন? তাকাতে পারিনা; চোখ জ্বলে যায়!"
তোমাকে ভালোবাসতে বাসতে আমি মিথ্যে বলতে শিখে যাই।
তুমি জিজ্ঞেস করো- কার ফোন এসেছিলো?
আমি ইতস্তত হয়ে বলে দিই- ছোটবেলার বন্ধু।
অথচ, রোজ রোজ তুমি যে আমাকে দ্যাখো, এটা আমি নই।
তোমাকে ভালোবাসতে যেয়ে আমি নিজেকে হারিয়েছি। অবসরে তোমার মুখটা কল্পনা করতে করতে, কত্ত দিন নিজের মুখটা দেখিনা।
কত্তদিন অন্ধকারে হেটে যাওয়ার কালে তাকাইনা, নিজের ছায়ার দিকে।
এই যে পরিপাটি হয়ে থাকা আমার ভেতর আসলে আমি নেই।
আমি ছিলাম, যখন তুমি ছিলে না।
এই তো ক'দিন আগেও আমি রাত জেগে বসে থাকতাম। ঘুম থেকে উঠে ঘড়ির দিকে তাকালেই বিকেল নেমে আসে।
ওসব বিকেলের ঘুম ভাঙ্গা চোখে যে বিষন্নতা থাকে, যত'টা একাকিত্ব জায়গা করে নেয় বুকের ভেতর, এসব থাকেনা সকালের কোলাহলে।
সকালের পাখির ডাক থাকে মিষ্টি, সন্ধ্যার পাখি হতাশার শব্দ করতে করতে নীড়ে ফিরে। আমি সেই হতাশাকে অনুভব করা প্রেমিক। আমি জীবন খুঁজে পাই বিষন্নতায়।
আমার বেঁচে থাকার ডেফিনেশনে নিঃসঙ্গতাই কেবল একানায়কতান্ত্রিক আচরন করে চলে সকালের পর বিকেল, বিকেলের পর রাত।
এই যে তুমি হাত ধরে বসে থাকো।
কাঁধে নাক ঘষে একটা বাচ্চা শিশু হয়ে যাও। নির্ভরশীলতার আঙুল ছুয়ে আপ্লুত হও ভরসায়। আমার দুঃশ্চিন্তা ভর করে বুকে।
মায়া হয়।
অথচ আমি চাই, আমার কোন ব্যক্তিগত মানুষ না হোক।
শূন্যতার আনন্দ বিলীন হয়ে যায়, ভরসার আঙুলে।
এই যে তুমি আমাকে গুছিয়ে দাও, এই গোছানো আমিটা, আমি নই।
আমার নিজেকে পাওয়া যায় অগোছালো মধ্যাহ্নে। তপ্ত রোদে।
কুচকানো বিছানার চাদরে। পকেটের প্যাচানো হেডফোনে।
আমাকে খুঁজে পাওয়া যায়, টং এর চায়ে। মাঝরাতের কবিতায়! দেয়ালের ছবিটায়।
তোমাকে ভালোবাসতে বাসতে কখন যে নিজেকে ভালোবাসতে ভুলে গেছি, জানিনা।
নিজের জন্মদিন মনে থাকেনা; তোমার জন্ম তারিখে লাল রং দেওয়া থাকে ক্যালেন্ডারে।
নিজেকে ভুলে গেলে, নিজেকে ক্ষমা করা যায়। তোমাকে ভুলে গেলে পাপ ছেয়ে যাবে সমস্ত শহরে।
এই তো সেদিন তোমাকে বুকে নিয়ে বসে থাকার কালে নিজেকে খুঁজতে যেয়ে দেখি, একটা অবয়ব হাটুতে মুখ লুকিয়ে কুকড়ে বসে আছে দেয়ালের কোণে।
আমি তার কাছে যেয়ে দেখি, ওটাই আসল আমি।
যে আমিটা তোমার যত্ন নিই, ওটা আমি নই।
ওটা আমার দায়িত্ববোধ।
রোজ রোজ আয়নায় নিজের প্রতিচ্ছবি দেখলে, নিজেকে ভালোবাসতে ইচ্ছে হয়।
তোমার চোখে যে আমাকে দেখি, ওটা মিথ্যা। ওটা সম্পর্কের কাল্পনিক অবয়ব।
কারো চোখে কারো প্রতিচ্ছবি দেখা যায়না কখনো! "তোমার চোখে আমি নিজেকে দেখি" এটুকু না বললে, তুমি বুঝবেনা ভালোবাসি, তাই বলি।
আমি আজকাল নিজেকে ভুলে গেছি।
ভুলে গেছি কত'টা চন্দ্রমল্লিকা ফুটে পূর্নিমা রাতে, আমাদের বারান্দায়।
কত'টা আলো ধার করে জোসনা ছড়ায় মানবিক চাঁদ। কতটুকু অসুখ বুকে জমে গেলে, একা লাগে।
আমি ভুলে গেছি,
কত'টা অযত্নে নিজেকে খুঁজে পাওয়া যায় অবসরে।
অথচ, একটা কাল্পনিক আবেগ নিয়েই বেঁচে থাকতে হয় পৃথিবীর বুকে।
কারন, শুধু একবার তোমাকে বলেছি ভালোবাসি। তোমাকে ভালোবাসি বলেছি মানে, সারাজীবন ভালোবাসতে হবে।
তোমাকে ভালোবাসি মানে, নিজেকে ভালোবাসা যাবেনা আর।
নিজেকে ভালোবাসতে গেলেই মানুষ প্রতারক হয়ে উঠে।
আজকাল, তোমাকে ভালোবাসতে বাসতে ভুলে গেছি, শেষ কবে নিজেকে ভালোবেসেছিলাম।
নিজেকে ভালোবাসিনা! অথচ, রোজ রোজ তোমাকে ভালোবাসার ভান করি!

Comments

Popular posts from this blog