সাম্প্রদায়িকতা ব্যপারটা আমার ভেতর কখনোই আমি আসতে দিইনি।
আমি ছোটবেলা থেকে বহু মানুষের সাথে মিশেছি। সময়ে অসময়ে স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় এবং কর্মজীবনে হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খ্রিস্টান সব ধর্মের বন্ধু বানিয়েছি।
আমি হিন্দুর ঘরে ভাত খেয়েছি, বৌদ্ধের সাথে এক বিছানায় বছরের পর বছর ঘুমিয়েছি, আমি খ্রিস্টানের অর্ধেক খাওয়া পানির বোতলে চুমুক দিয়েছি নির্দ্বিধায়! ধর্মের ব্যপারটা আসার আগে আমি ভাবি আমি মানুষের সাথে মিশছি!
প্রতিটা মানুষের আলাদা আলাদা ধর্মীয় মতাদর্শ থাকতেই পারে। প্রতিটা মানুষ তার নিজস্ব বিশ্বাসের পেছনে কিছুনা কিছু লজিক দাঁড় করিয়েই রাখে।
যে মূর্তি পূজা করে, তার বিশ্বাসের জায়গাটা তার কাছে শক্ত। যে অদৃশ্যমান আল্লাহের উপরে বিশ্বাস রাখে, তার কাছেও তার ধর্মের প্রতি যথেষ্ট যুক্তি আছে!
কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার অধিকার অন্য কারো নেই।
চোখের সামনে অনেক কিছুই ঘটবে। আপনার কাছে যেটা মিথ্যে, আরেকজনের কাছে সেটাই সত্যি!
আপনি যাকে অবিশ্বাস করছেন৷ অন্যজন সেটাতেই তার সমস্ত বিশ্বাস ঢেলে দিয়েছেন।
আমাদের সবারই আলাদা আলাদা বিশ্বাসের যুক্তি আছে। আমার কাছে মসজিদই একমাত্র ইবাদতের পবিত্র জায়গা, আমার পাশের বিছানায় শুয়ে থাকা ছেলেটা রোজ রোজ মন্দিরে যেয়ে পার্থনা করে। আমার মন্দিরে বিশ্বাস নেই, তার মসজিদে বিশ্বাস নেই।
তবুও আমরা একই ছাদের নিচে থাকি, একজন অন্যজনের বিশ্বাসের প্রতি সম্মান দেখিয়ে।
পৃথিবীর সবকিছু আমাদের চাওয়া পাওয়ার মতো হয়না।
আপনি আল্লাহের কাছে পরীক্ষার ফলাফল ভালো হওয়ার প্রার্থনা করেন, আপনার বন্ধু একই প্রার্থনা করেন তার দেবতার কাছে।
দুজনই পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করলে, একজন কৃতজ্ঞ হয় তার আল্লাহের কাছে, অন্যজন কৃতজ্ঞ হয় তার দেবতার কাছে।
দুজনের মতাদর্শ আলাদা। দুজন মানুষের বিশ্বাস আলাদা।
এটাই তো হবে। এটাই তো হওয়ার কথা।
আমরা নিজের বিশ্বাসকে অন্যের উপর চাপিয়ে দিতে চাই। আমরা ধরে নিই, আমিই ঠিক, বাকিসব ভুল!
আমরা আমাদের নিজের বিশ্বাসকে সবচেয়ে বেশি প্রায়োরিটি দিই।
আমি বলছিনা, আপনি অন্যের বিশ্বাসকে বিশ্বাস করে নিন। বরং আপনি মানুষ হিসেবে অন্য একজন মানুষের বিশ্বাসের জায়গাটাকে সম্মান করুন।
সম্মানটুকু না করতে পারলে, চুপ থাকুন! কিছু কিছু বিষয়ে চুপ থাকলে, ভালো লাগে!
এইসব ঈদ অথবা পূজা নিয়ে দ্বন্দ্ব করলেই অশান্তি বাড়বে।
দিনশেষে আমাদের তো একজন অন্যজনের পাশের ডেস্কে বসেই কাজ করতে হয়।
মাঝে মাঝে নিজ সম্প্রদায়ের বন্ধুর চেয়েও অন্য সম্প্রদায়ের বন্ধুর সহযোগিতাটা বেশি পাওয়া যায়। আমাদের ট্রাফিক জ্যামে আটকে যাওয়া সময়ে কখনো কখনো পাশের সিটে ভিন্ন বিশ্বাসের মানুষের সাথে কথা বলেই বিরক্তি কাটাতে হয়।
ধর্মের বাইরের জীবনে সবাই মানুষ। সবারই দুটো চোখ, দুটো পা, একটা মাথা আছে।
বাহির থেকে সব মানুষই দেখতে একইরকম। তবুও, ভেতরের বিশ্বাস নিয়ে আমাদের এত জ্বালাপোড়া কেন?
মানুষকে তার নিজ বিশ্বাসে বাঁচতে দেওয়ার অধিকার দিন।
নিজের বিশ্বাসকে অন্যর উপর চাপাতে গেলেই অশান্তি বেড়ে যায়!
ধর্ম যার যার, উৎসব পালন করার অধিকার তার তার! আমাদের সবকিছু নিয়ে মাথা না ঘামালেও চলবে!

Comments

Popular posts from this blog