- কেমন আছো, দেবলীনা?
- ঠিক কেমন থাকবো চেয়েছিলে?
- ওই যে দূরের পাখি যেমন মুক্ত ডানায় ভেসে চলে মহাশূন্যে, তাদের মতো স্বাধীন হয়ে বাঁচো, এটাই তো চেয়েছিলাম!
- এজন্যই মুক্ত করে দিয়ে চলে গেছো, অনিরুদ্ধ?
- আমি চেয়েছিলাম, তুমি বাঁচতে শিখো!
- তোমার চাওয়া না চাওয়াতে আমি বাঁচতে শিখিনি!
- এই যে আজকাল কত্ত স্ট্রং হয়ে গেছো!
- এটা নিজের প্রয়োজনে!
- আমি থাকলে, এতটা স্ট্রং নিশ্চয় হতে না! নিজে নিজে বাঁচতে শিখতে হলে, একা হওয়া জরুরী!
- কই, আমি তো এভাবে বাঁচতে চাইনি! দূর্বলতা বেঁচে থাকার সার্থকতাকে নষ্ট করে, এটা তুমি শিখিয়েছো! আমি তো জানতাম, ভালোবাসলে এমনিতেই একজনের প্রতি অন্যজনের নির্ভরশীলতার একটা জায়গা তৈরী হয়!
- ওরকম পরজীবীর মতো জীবন, ভালো লাগে?
- তুমি কখনো ভালোবাসতে পারোনি! ভালোবাসলে, লেগে থাকতে ইচ্ছে হয়! যে পরজীবী হতে পারেনা, সে ভালোবাসবে কি করে?
- আমার চলে যাওয়াতে খুব অভিযোগ হয়?
- নাহ, একদম না!
- সত্যিই কোন অভিযোগ নেই, দেবলীনা?
- নাহ নেই! মানুষের চলে যাওয়া নিয়ে আমার অভিযোগ নেই!
অভিযোগ তার প্রতি হয়, যে রয়ে যায়! যে খুব ছোট্ট কারনে কিংবা বিনা নোটিশে দূরত্ব বাড়িয়ে দেয়, তার প্রতি অভিযোগ রাখাটাই জীবন এবং মৃত্যুর মাঝামাঝিতে থাকা সময়কালের সবচেয়ে বড় বোকামি!
- এখন আর রাত জেগে কান্না পায়না, নাহ?
- শোন, ভুল মানুষের পেছনে সময় বিনিয়োগ করে ঠকে যাওয়ার পর আবার সেই ভুল মানুষের জন্যই আবেগ খরচ করার যথেষ্ট কারন নেই!
যে হুটহাট চলে যাওয়ার ক্ষমতা নিয়ে সম্পর্কের বন্ধনে আবদ্ধ হয়, সে মানুষ যত দ্রুত জীবন থেকে চলে যায়, ততোই মঙ্গল!
- ঘৃণা জন্মেছে খুব?
- অত'টা সময় কোথায়? তোমাকে তো চিন্তার রাজ্য থেকে অবাঞ্চিত ঘোষনা করা হয়েছে!
- এত'টা বদলে গেছো কি করে?
- কি চাও, তোমার জন্য ধুকে ধুকে মরবো?
- নাহ, তা চাইনি!
- চেয়েছিলে, অনিরুদ্ধ!
- সব বুঝতে পারো?
- নাহ, তবে তোমাকে বুঝতে পারি!
- এখন কি বুঝতে পারছো?
- তুৃমি ফিরে আসতে চাইছো! তোমার কন্ঠস্বরে ফিরে আসার আকুলতা আছে!
- একটা সুযোগ পাওয়া যাবে না আর, নাহ?
- নাহ, যে হৃদপিন্ডের অধিকার একবার নষ্ট হয়, সেখানে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছেরা আর জেগে উঠে না! আমি ফিরবো না কখনোই!
- ভালোবাসো কাউকে?
- তোমার মতো মানুষ পাল্টানো স্বভাব তো আমার নেই! তুমি মুগ্ধতা প্রিয় মানুষ! মুগ্ধতা কেটে গেলেই তোমার জায়গা পরিবর্তন করার ইচ্ছে হয়! আমার মন তোমার মতো অত'টা বিশাল না! যার তার কাছে আমি মুগ্ধতা খুঁজিনা!
- তবে কি এখনো?
- নাহ, তোমার জন্য আমার এখন আর কোন আবেগের জায়গা নেই! তুমি এখন লোকাল বাসে ঝুলে যাওয়া অন্য দশটা পুরুষের মতোই! আমি দেখি, কিন্তু এ মানুষ আমার পরিচিত কেউ নয়!
- তোমার কাছ থেকে চলে আসার পর, অন্য অনেক মানুষই এসেছে জীবনে! তবুও কোথায় যেন তোমার ঘ্রাণটা আটকে আছে!
- যে পুরুষ অন্য কারো বুকে মুখ গুজে আমার ঘ্রাণ পায়, সে পুরুষ আমার পুরুষ না! যে আমার, সে আমারই! আমি ছাড়া তার আর কোন দ্বিতীয় অপশন থাকতে পারেনা!
- মানুষই তো ভুল করে, নাহ!
- তুমি এখনো মানুষ হয়ে উঠতে পারোনি! তুমি চলে যাওয়ার আগে বলেছিলে, আমার সাথে তোমার কোথাও একটা গ্যাপ আছে! আমি যার শূন্যস্থান পূরণ করতে পারিনি ভালোবেসে, তার কাছে আবার ফিরে যাবো কোন বিশ্বাসে?
- আমাকে ভুল করেও আর মনে পড়ে না?
- বিচ্ছেদের পর ঘরে ফিরে আমার কপালের টিপটা আয়নায় লাগিয়ে রেখেছি! রোজ একবার দুবার চোখে পড়ে! ৬৭২ দিন কেটে গেছে! টিপের আঠা নষ্ট হওয়ার পথে! আঠা নষ্ট হয়ে যাওয়া টিপ একদিন আয়না থেকে ঝরে পরবে! মানুষও বোধয় ঝরে যায় সময়ের সাথে সাথে! তোমাকে একটু হয়তো মনে পড়ে! একদিন আর পড়বে না!
- ভুলতে চাও?
- সবকিছু কি চাইলেই হয়? তোমাকে যখন চেয়েছিলাম, পাইনি! তুমি যখন চাইছো, পাচ্ছো না! ভুলে যাওয়ার ব্যপারটা চাওয়া থেকে হয়না! যে জিনিস তুমি খুব করে চাইবে তা পাবে না, জগতের নিয়ম তো এটাই!
তাছাড়া, মানুষ একদিন এমনিতেই হারিয়ে যায়! শুধু সময়ের ব্যপার!
তোমার স্মৃতিরা আবছা হচ্ছে, তুমিও!
- চলে যাবো?
- এখন তো আর নেই!
- ফিরবেনা?
- কক্ষোনো না!
- ভালো থেকো!
- যে একবার একা থাকতে শিখে যায়, ভালো থাকারা তার পায়ের কাছে এসে কুর্নিশ করে! চলে যাও, এ পথে আর কোনদিনই এসো না!

Comments

Popular posts from this blog