আমাদের স্কুলের রুমগুলো ছিল সারিবদ্ধ। তার সামনেই একটা বারান্দা ইমারতের এপাশ থেকে শুরু হয়ে ওপাশে যেয়ে শেষ হয়েছে।
তখন আমি দশম শ্রেণীর ছাত্র এবং যে মেয়েকে পছন্দ করতাম, সে অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী। আমাদের অংক শিক্ষককে আমরা বাঘের মতো ভয় পেতাম। সে ক্লাসে ঢুকা মাত্রই সমস্ত ক্লাসে পিনপতন নিরবতা বজায় থাকতো। একদিন পড়া না পারার কারনে স্যার আমাকে বারান্দায় যেয়ে কানে ধরে দাঁড়ায় থাকতে বললো। স্যারের আদেশ অমান্য করার ক্ষমতা আমার ছিলনা। বারান্দায় যেয়ে কানে ধরে দাঁড়ায় থাকার সময় খেয়াল করলাম আমার সেই অষ্টম শ্রেণীর সম্ভাবনাময় প্রেমিকা ওয়াশরুমে যাওয়ার জন্য বের হয়েছে। আমার দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে চলে গেলো। আমি লজ্জায় মুখ ঘুরিয়ে রাখলাম। তারপর আর কখনো সেই মেয়েকে মুগ্ধ করার চেষ্টা করিনি। তবে, এটা চেষ্টা করেছি যাতে আর কখনোই ক্লাসের বাইরে কান ধরে না দাঁড়াতে হয়। কিশোর বয়সের সেই অপমানবোধটা তখন যত'টা তীব্র ছিল, স্যারের প্রতি সাময়িক যে ক্রোধ কাজ করেছিলো, সেসব এখন ভাবলে হাসি আসে। নষ্টালজিক হয়ে যাই। আহ, কি দিন ছিল একদিন! কি সুন্দর সব শৈশব কৈশোর কাটিয়েছি স্কুল জীবনে।
তখন আমি দশম শ্রেণীর ছাত্র এবং যে মেয়েকে পছন্দ করতাম, সে অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী। আমাদের অংক শিক্ষককে আমরা বাঘের মতো ভয় পেতাম। সে ক্লাসে ঢুকা মাত্রই সমস্ত ক্লাসে পিনপতন নিরবতা বজায় থাকতো। একদিন পড়া না পারার কারনে স্যার আমাকে বারান্দায় যেয়ে কানে ধরে দাঁড়ায় থাকতে বললো। স্যারের আদেশ অমান্য করার ক্ষমতা আমার ছিলনা। বারান্দায় যেয়ে কানে ধরে দাঁড়ায় থাকার সময় খেয়াল করলাম আমার সেই অষ্টম শ্রেণীর সম্ভাবনাময় প্রেমিকা ওয়াশরুমে যাওয়ার জন্য বের হয়েছে। আমার দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে চলে গেলো। আমি লজ্জায় মুখ ঘুরিয়ে রাখলাম। তারপর আর কখনো সেই মেয়েকে মুগ্ধ করার চেষ্টা করিনি। তবে, এটা চেষ্টা করেছি যাতে আর কখনোই ক্লাসের বাইরে কান ধরে না দাঁড়াতে হয়। কিশোর বয়সের সেই অপমানবোধটা তখন যত'টা তীব্র ছিল, স্যারের প্রতি সাময়িক যে ক্রোধ কাজ করেছিলো, সেসব এখন ভাবলে হাসি আসে। নষ্টালজিক হয়ে যাই। আহ, কি দিন ছিল একদিন! কি সুন্দর সব শৈশব কৈশোর কাটিয়েছি স্কুল জীবনে।
গত কয়েকদিন আগে ভিকারুন্নেসার প্রভাতি শাখার ছাত্রী অরিত্রির সুইসাইড করার ঘটনায় আমরা দুইভাগে বিভক্ত হয়েছি। এই দুই ভাগে বিভক্ত হওয়ার অভ্যাস আমাদের চিরন্তন। যেকোন কিছুতেই আমরা দুটো ভাগে ভাগ হয়ে যাই। তবে, লজিক্যালি চিন্তা করলে একটা মৃত্যুর কাছে হেরে যায় সমস্ত নীতি এবং নৈতিকতার সংবিধান।
আমরা স্কুলে কেন যাই?
নিশ্চয়ই নৈতিকতার শিক্ষা নিতে। নিজেকে জ্ঞানী বানানোর চেয়ে আমাদের মূল উদ্দেশ্য থাকে নিজেকে একজন মানুষ বানানো। একটা শিশু মানুষ হওয়ার পেছনে দুটো গুরুত্বপূর্ণ জায়গা হলো ঘর এবং স্কুল। আমাদের শৈশব কৈশোরে আমরা পরিবারের চেয়ে স্কুলের সাথে বেশি জড়িয়ে থাকি। আমরা সেটাই শিখতে থাকি, যেটা আমাদেরকে আমাদের স্কুল শিক্ষা দেয়।
যেহেতু জন্ম থেকেই কেউ মানবিক মূল্যবোধ মগজে নিয়ে পৃথিবীতে আসেনা, সেহেতু মস্তিষ্কের গঠনে শিক্ষকদের ভূমিকার জায়গাটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
নিশ্চয়ই নৈতিকতার শিক্ষা নিতে। নিজেকে জ্ঞানী বানানোর চেয়ে আমাদের মূল উদ্দেশ্য থাকে নিজেকে একজন মানুষ বানানো। একটা শিশু মানুষ হওয়ার পেছনে দুটো গুরুত্বপূর্ণ জায়গা হলো ঘর এবং স্কুল। আমাদের শৈশব কৈশোরে আমরা পরিবারের চেয়ে স্কুলের সাথে বেশি জড়িয়ে থাকি। আমরা সেটাই শিখতে থাকি, যেটা আমাদেরকে আমাদের স্কুল শিক্ষা দেয়।
যেহেতু জন্ম থেকেই কেউ মানবিক মূল্যবোধ মগজে নিয়ে পৃথিবীতে আসেনা, সেহেতু মস্তিষ্কের গঠনে শিক্ষকদের ভূমিকার জায়গাটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
অরিত্রি পরীক্ষায় নকল করেছে। এটা আনডাউটেডলি অপরাধ এবং স্কুলের নিয়ম অনুযায়ী একজন ছাত্র বা ছাত্রী নকল করলে তাকে প্রশ্রয় না দিয়ে টিসি দিয়ে দেওয়াটাও কোন অন্যায় নয়। বরং নকলের শাস্তি স্কুল থেকে বহিস্কার হওয়াতে স্কুলের শৃঙ্খলা বজায় থাকে৷
নকল করার শাস্তি ঠিক আছে। তবে, সন্তানের নকল করার বিষয়ে তার অভিভাবকদের সাথে কিরকম আচরন করতে হবে, এই শিক্ষাটা শিক্ষকদেরও নিতে হবে। বেশিরভাগ বাবা মা ই চায় না, তার সন্তান অনৈতিক কোন কিছু করুক। তবুও সন্তান তো, কিছু একটা করে ফেললে তাকে তো মেরে ফেলা যায়না। সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য হলেও মা বাবা তাদের সন্তানকে সঠিক পথে আনার সর্বোচ্চ চেষ্টাটাই করে। সেই বিবেচনা থেকেই হয়তো অরিত্রির বাবা তার শিক্ষকের কাছে মাফ করে দেওয়ার আবদার নিয়ে গিয়েছিলো। আমরা যারা নকলের বিরুদ্ধে কথা বলতে যেয়ে একটি প্রাণের বিনাসের প্রতি অবিবেচক হয়ে যাচ্ছি, তাদের সন্তানরাও যদি এরকম কোন কিছু করতো, তাহলে আমরাও অরিত্রির বাবার মতোই আরেকটা সুযোগ চাইতাম।
একজন ছাত্র নকল করতেই পারে, নকল শব্দটাই স্টুডেন্টের সাথে জড়িত। একজন দশম শ্রেণীর স্টুডেন্টের চিন্তা এবং মেধার পরিপক্কতাটাই বা কতটুকু!
অরিত্রির বাবা মা যেটা করেছে, এটা সকল বাবা মা ই করবেন। এখানে তারা অন্যায়কে প্রশ্রয় দিয়েছেন ব্যপারটা তেমন নয়, তারা সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়েই আরেকটা সুযোগ চেয়েছিলেন।
একজন ছাত্র নকল করতেই পারে, নকল শব্দটাই স্টুডেন্টের সাথে জড়িত। একজন দশম শ্রেণীর স্টুডেন্টের চিন্তা এবং মেধার পরিপক্কতাটাই বা কতটুকু!
অরিত্রির বাবা মা যেটা করেছে, এটা সকল বাবা মা ই করবেন। এখানে তারা অন্যায়কে প্রশ্রয় দিয়েছেন ব্যপারটা তেমন নয়, তারা সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়েই আরেকটা সুযোগ চেয়েছিলেন।
স্কুলের প্রসিডিউর যদি বহিষ্কার হয়, তবে সেটাই হতো। তবে, অভিভাবকের সাথে খারাপ আচরন করার নূন্যতম অধিকারও স্কুল কতৃপক্ষের নেই। এটা একজন শিক্ষকের ম্যানারের ব্যপার। ছাত্রীকে বেত দিয়ে পেটানো যেতে পারে, সেজন্য তার মা-বাবাকে পেটানো যায়না।
বরং পোলাইটলি বলে দেওয়া যায়, স্যার আমরা অত্যন্ত দুঃখিত যে আমাদের নিয়ম অনুযায়ী আমরা আপনার সন্তানকে এই স্কুলে আর রাখতে পারছিনা। তবে টিসি দিয়ে দিচ্ছি আপনি একটু কষ্ট করে অন্য স্কুলে ভর্তি করিয়ে নিন।
এই আচরনে সেই অভিভাবক অন্তত তার সন্তানের সামনে অপমানিত হয়না। প্রতিটা মানুষের একটা ব্যক্তিত্ব থাকে। একটা স্কুল সেই ব্যক্তিত্বে এট্যাক করার অধিকার রাখেনা।
নিজের জন্য নিজের মা বাবাকে অপমানিত হতে হয়, এই দৃশ্য কোন সন্তানই বোধয় সহ্য করার ক্ষমতা নিয়ে জন্মায় না।
আর যেহেতু এই বয়সটা আবেগের বয়স, সুতরাং সন্তানকে এসব ভুল করার পর একটু মানসিক সাপোর্ট তো মা বাবা দিবেই।
বরং পোলাইটলি বলে দেওয়া যায়, স্যার আমরা অত্যন্ত দুঃখিত যে আমাদের নিয়ম অনুযায়ী আমরা আপনার সন্তানকে এই স্কুলে আর রাখতে পারছিনা। তবে টিসি দিয়ে দিচ্ছি আপনি একটু কষ্ট করে অন্য স্কুলে ভর্তি করিয়ে নিন।
এই আচরনে সেই অভিভাবক অন্তত তার সন্তানের সামনে অপমানিত হয়না। প্রতিটা মানুষের একটা ব্যক্তিত্ব থাকে। একটা স্কুল সেই ব্যক্তিত্বে এট্যাক করার অধিকার রাখেনা।
নিজের জন্য নিজের মা বাবাকে অপমানিত হতে হয়, এই দৃশ্য কোন সন্তানই বোধয় সহ্য করার ক্ষমতা নিয়ে জন্মায় না।
আর যেহেতু এই বয়সটা আবেগের বয়স, সুতরাং সন্তানকে এসব ভুল করার পর একটু মানসিক সাপোর্ট তো মা বাবা দিবেই।
আমার মনে আছে, আমি দশম শ্রেণীর প্রি-টেস্ট পরীক্ষায় অংকে নকল করার জন্য এক্সপেইল হয়েছিলাম। সমস্ত ক্লাসে ক্লাসে নোটিস দিয়ে দেওয়া হয়েছিলো আমার নামে। যে স্যার এক্সপেইল করেছিলো দুদিন পর তার সন্তান হায়ার ম্যাথে নকল করে ধরা খাওয়ার পর অন্য এক স্যার তাকে পরীক্ষা দিতে দেয়। আমি পরীক্ষা শেষে হেড মাষ্টারের রুমে যেয়ে এটা নিয়ে কথা বলে তাকে এক্সপেইল করাতে বাধ্য করি। তখন আমার সেই স্যারও তার সন্তানকে আরেকটা সুযোগ দেওয়ার জন্য আকুতি মিনুতি করেছিলো। সন্তান তো, মা বাবা চাইলেও সবসময় অতটা নিষ্ঠুর হতে পারেনা।
পৃথিবীর সমস্ত শিক্ষকরাই মানুষ হয়না। সমস্ত শিক্ষকরা অমানুষও হয়না।
আমার জীবনে যেমন খারাপ শিক্ষক পেয়েছি, ভালো শিক্ষকও পেয়েছি। স্কুলের স্যারের অনৈতিক ঘটনার জন্য তাকে মাফ চাইতেও বাধ্য করেছি। অন্যায় সবসময় অন্যায়ই। তবে, সন্তানের অন্যায়ে মা বাবাকে অপমান করার এই গন্ডি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। একজন শিক্ষক বরং তাদেরকে কাউন্সেলিং করতে পারে। আমরা আমাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাই মানুষ করতে, মানুষ বানিয়ে তারপর পাঠাই না। মানুষ এমনি এমনি হয়ে গেলে স্কুলের প্রয়োজন নেই।
আমার জীবনে যেমন খারাপ শিক্ষক পেয়েছি, ভালো শিক্ষকও পেয়েছি। স্কুলের স্যারের অনৈতিক ঘটনার জন্য তাকে মাফ চাইতেও বাধ্য করেছি। অন্যায় সবসময় অন্যায়ই। তবে, সন্তানের অন্যায়ে মা বাবাকে অপমান করার এই গন্ডি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। একজন শিক্ষক বরং তাদেরকে কাউন্সেলিং করতে পারে। আমরা আমাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাই মানুষ করতে, মানুষ বানিয়ে তারপর পাঠাই না। মানুষ এমনি এমনি হয়ে গেলে স্কুলের প্রয়োজন নেই।
অরিত্রি চলে গেছে, সেই দায়ভার হয়তো স্কুলের না, তবে তার মা বাবাকে অপমান করা এবং তার নিকটবর্তী মূল পরীক্ষা না দিতে পারার এই হতাশা তাকে বাঁচতে দেয়নি।
বয়সটা তো কম। তাদের প্রতি আমাদের আরেকটু নমনীয় হতে হবে।
ছাত্ররা শিক্ষকদের সন্তানের মতো। আর সন্তান ভুল করলে তাকে সঠিক পথে চলার পথ চিনিয়ে দেওয়ার দায়িত্বটা তো মা বাবারই।
বয়সটা তো কম। তাদের প্রতি আমাদের আরেকটু নমনীয় হতে হবে।
ছাত্ররা শিক্ষকদের সন্তানের মতো। আর সন্তান ভুল করলে তাকে সঠিক পথে চলার পথ চিনিয়ে দেওয়ার দায়িত্বটা তো মা বাবারই।
আমাদের মা বাবাদেরও উচিত ঘরে বসে নিজের সন্তানকে নৈতিকতার শিক্ষা দেওয়া। সমস্তটা স্কুল করবেনা। টাকার বিনিময়ে শিক্ষা আর দায়িত্ববোধ থেকে দেওয়ার শিক্ষার পার্থক্য অনেক।
আপনার সন্তান অপরাধ করলে সেই দায়ভার কিছুটা আপনারই। স্কুলের মতো করে আপনিও আপনার সন্তানকে নৈতিকতার শিক্ষা দিতে ব্যর্থ।
আপনার সন্তান অপরাধ করলে সেই দায়ভার কিছুটা আপনারই। স্কুলের মতো করে আপনিও আপনার সন্তানকে নৈতিকতার শিক্ষা দিতে ব্যর্থ।
অরিত্রি চাইলে ঘুরে দাঁড়াতে পারতো। বাঁচতে পারতো। নতুন করে শুরু করতে পারতো।
তবে, বয়সটা তো বেশি নয়। এসব অপমানবোধ নিতে পারেনি মেয়েটা। তার মৃত্যুর দায়ভার তার নিজের ব্যক্তিগত, স্কুল শিক্ষকের এবং বাবা মায়ের সম্মিলিত ব্যর্থতা।
এই হত্যায় কেউই নিষ্পাপ নয়, কেউই অত'টা পবিত্র নয়।
তবে, বয়সটা তো বেশি নয়। এসব অপমানবোধ নিতে পারেনি মেয়েটা। তার মৃত্যুর দায়ভার তার নিজের ব্যক্তিগত, স্কুল শিক্ষকের এবং বাবা মায়ের সম্মিলিত ব্যর্থতা।
এই হত্যায় কেউই নিষ্পাপ নয়, কেউই অত'টা পবিত্র নয়।
Comments
Post a Comment