- কেমন আছেন, স্বর্নালী সেন?
- ওহ, অনিন্দ্য!
- বাহ, কন্ঠস্বর শুনেই চিনে ফেললে?
- কিছু কন্ঠস্বর কখনো অপরিচিত হয়না!
- আমি তো ভেবেছিলাম সময়ের সাথে সাথে কন্ঠস্বরও মনে থাকে না।
- তোমার কোন ভাবনাই কি কখনো সঠিক ছিল?
- রাগটা কমেনি এখনো! অনেক বছর তো হলো, এবার একটু স্বাভাবিক হও!
- এতবছর পর স্বাভাবিক হওয়াটাও কি খুব জরুরী?
- তা না! মানুষটার প্রয়োজনই যেখানে ফুরিয়ে গেছে, সেখানে স্বাভাবিক আর অস্বাভাবিক এর হিসেব করে আর কি হবে, স্বর্নালী?
- এসব প্রয়োজন ফুরিয়ে যাওয়ার গল্প শোনাতে ফোন দিয়েছো?
- নাহ! অনেকদিন কথা হয়না! তোমাকেও খুব মনে পরছিলো! তাই ভাবলাম, একটু কথা তো বলাই যায়!
- মনে পরলেই কথা বলতে হবে?
- খুব বিরক্ত হচ্ছো বোধয়!
- বিরক্তি ছাড়া আর কি কিছু দিতে পেরেছো কখনো?
- সবসময় বিরক্তি খুজতে খুজতে তুৃমি ভালোবাসাটুকু খেয়ালই করোনি!
- কি করে খেয়াল করবো? এত হ্যাংলা স্বভাবের একটা মানুষের মাঝে ভালোবাসা খুজতে চাওয়াটাও বিরক্তিকর!
কখনো আমার জন্য ব্যথা অনুভব হয়েছে তোমার?
- তোমার জন্য রোজ রাতে বুকের ভেতর মাথা ব্যথা হয়!
- এসব হ্যাংলামো করো বলেই, তোমার সাথে আমার থাকা হয়নি!
কোনদিন কোন কিছু নিয়ে সিরিয়াস হওনি!
- সিরিয়াস হওয়াটা কি খুব জরুরী, স্বর্না?
- অবশ্যই জরুরী! একজন মানুষ যদি জীবন সম্পর্কে অতটুকু সিরিয়াস না হতে পারে, তার সাথে কি করে সারাজীবন থাকা যায়!
তোমাকে যখন যা বলতাম, তুমি হাসি ঠাট্টা করে তার গুরুত্ব কমিয়ে দিতে! আর মাঝে মাঝে তোমার লেইম কথা-বার্তা তোমার ব্যক্তিত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করে!
- সিরিয়াস হলে কি হয়, বড়জোর ব্যথা বাড়ে! এই যে তুমি নেই, এই শূন্যতাটাকে খুব সিরিয়াসলি নিয়ে নিলে, বেঁচে থাকাটা কঠিন হয়ে যাবে!
তারচেয়ে, আমি বরং সিরিয়াস না হয়েই ভালো আছি।
- তোমার পার্সোনালিটি সমস্যা আছে, অনিন্দ্য!
- ব্যক্তিত্ব বলতে তুমি আসলে কি বুঝো, স্বর্না?
- ওসব তুমি বুঝবেনা।
- তুমি আমার মাঝে কি কখনো আমাকে খুজে দেখেছো?
- খুজে দেখার মতো তোমার মাঝে কিছু ছিলোনা কখনোই।
- সবকিছুতে সিরিয়াসনেস থাকলেই কি সে ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষ হয়?
- না হলেও, তাকে নিয়ে একটা জীবন কাটানো সহজ!
- পেয়েছো অমন কাউকে?
- বাবা, বিয়ে ঠিক করেছে! ছেলে একটা প্রাইভেট কোম্পানির ম্যানেজেরিয়াল লেভেলের বড় চাকরি করে!
কথা বলার ভঙ্গিমাটাই অন্যরকম! সবকিছুতে বুঝে শুনে জবাব দেয়!
- ওহ, তাহলে তো বেশ ভালো। তোমার মনের মতোই কেউ এসেছে জীবনে।
- মনের মতো কিনা জানিনা! তবে, তোমার মতো কেয়ারলেস হ্যাংলা টাইপের না অন্তত!
- তোমার মনে আছে, প্রথম পরিচয়ে তুমি কি বলেছিলে?
তুমি বলেছিলে, আপনি সারাক্ষন এমন হাসি খুশি থাকেন?
আমি বললাম- "হ্যা, সবসময়!"
তুমি বললে, "বাহ, মানুষ এত'টা অদ্ভুত ও হয়?"
- ওসময়টা একটা ফ্যান্টাসি ছিল! জীবন তো আর ফ্যান্টাসিতে চলে না!
- বেঁচে থাকাটাই একটা ফ্যান্টাসি!
- ওটা তোমার কাছে হতে পারে!
- একদিন, তোমার কাছেও মনে হবে!
- হবেনা!
- আচ্ছা, হবেনা!
- এতকিছু বললাম, রাগ হয়না?
- ভালোবাসার মানুষের রাগের বিপরীতে রাগ হলে, দূরত্ব বেড়ে যায়!
- দূরত্ব কি এখনো বাড়েনি?
- বাইরে থেকে বেড়েছে হয়তো! ভেতরে বাড়েনি! ভেতরে যেটা বেড়েছে, তার নাম শূন্যতা!
- তোমার ভেতর শূন্যতা? বড্ড হাসালে অনিন্দ্য!
- সারাজীবন হাসানোর দায়িত্বটা পেলাম না!
- এর জন্য কি তুমি নিজেই দায়ী নও?
- হ্যা, সমস্যাটা আমারই! হ্যাংলা স্বভাবের একটা ছেলে, কি করে কারো সারাজীবনের দায়িত্ব নিতে পারে!
- আমার কথায় মন খারাপ হয়েছে খুব?
- নাহ, মন ভালো হয়ে গেছে!
- মিথ্যে!
- তোমাকে দোষ দেওয়ার চেয়ে মিথ্যেরা সুন্দর!
- তুমি সেই আগের মতোই রয়ে গেছো!
- যে বদলে যায়, সে ভালোবাসেনি কখনো!
- তবে কি আমি?
- না না, তোমার কথা বলছিনা। তুমিও বদলাওনি! যেটুকু বদলেছো, তার জন্য আমিই দায়ী!
- সব দোষ এখনো নিজের করে নাও!
- ভালোবাসি যে!
- ভালোবাসি বলো না! অপরাধী লাগে!
- প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ এখনো আছে!
- নাহ অনিন্দ্য, নেই! একবার দূরে চলে গেলে, কাছে আসার আর সুযোগ থাকেনা! যেটুকু সুযোগ থাকে, ওটা মিথ্যে!
- আমার তো কোন অভিযোগ নেই!
- তবুও! বুকের ভেতরের শূন্যতায় আবার ফিরে গেলেও, শূন্যতা কমেনা!
- ফিরে আসো, স্বর্নালী!
- প্লিজ!
- কেন?
- কাল আমার বিয়ে! হাতে মেহেদী লাগানো হয়েছে কিছুক্ষন আগে! সবাই বিয়ের আয়োজন নিয়ে ব্যস্ত!
- ওহ, Sorry!
- আজ রাখছি!
- হুম!
- ভালো থেকো অনিন্দ্য!
- চেষ্টা করবো!

Comments

Popular posts from this blog