- কেমন আছো, মাধবীলতা?
- যেমন রেখে গ্যাছো!
- তারমানে ভালো নেই!
- খারাপ আছি নাকি ভালো, আজকাল আর বুঝিনা। কখনো নিজেকে তো নিজে জিজ্ঞেস করিনা " আমি কেমন আছি?"
তুমি কেমন আছো, অনীল?
তুমি কেমন আছো, অনীল?
- হুম, বেশ ভালো।
- আসলেই ভালো আছো তো?
- জানিনা। খুব সম্ভবত ভালো এবং খারাপ থাকার মাঝামাঝি কিছু একটা আছে! এক কথায় বলা যায়, দোটানায় আছি!
- এখন কোথায় জব করছো?
- জব টব কিছু করছি না আপাতত। মাঝে মাঝে দৈনিক সংবাদপত্রের সাহিত্যের পাতায় টুকটাক লিখালিখি করি। সেখান থেকে যে'কটা টাকা পাই, তা দিয়ে টেনেটুনে মাস চলে যায়।
তুমি কোন চাকরি টাকরি করছো এখন?
তুমি কোন চাকরি টাকরি করছো এখন?
- হুম, করছি। একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে এইচ আর হিসেবে আছি।
- বাহ, তাহলে তো খুব ভালো আছো। মান-সম্মান, আভিজাত্য, মাস শেষে ভালো মাইনে সবই তো পাচ্ছো! বেশ সুখেই আছো তাহলে!
- একজন লেখক হয়ে, তুমি কি করে আভিজাত্যটাকেই সুখ বলতে পারলে?
- তবে কি অসুখ জমে গেছে বুকের ভেতর?
- এই অসুখটা বুকে জমেছিলো তখন, যখন তোমার সাথে আমার বিচ্ছেদ হলো!
- বিচ্ছেদ না হলে তো, কাঁধে ঝোলা নিয়ে ঘুরে বেরানো একজন কবির সাথেই জীবন কাটাতে হতো!
একবেলা খাবার পেলে, অন্যবেলা না খেয়ে থাকা! কোন বিলাসিতা নেই! দামী গাড়ি নেই! বাড়ি নেই! এয়ার কন্ডিশন রুম নেই!
একবেলা খাবার পেলে, অন্যবেলা না খেয়ে থাকা! কোন বিলাসিতা নেই! দামী গাড়ি নেই! বাড়ি নেই! এয়ার কন্ডিশন রুম নেই!
- ভালোবাসা থাকতো তো, অনীল?
- ভালোবাসায় মন ভরে, পেট ভরে না, লতা!
- পেটের চেয়ে মনের ক্ষুধার যন্ত্রনা অনেক বেশি তীব্র!
- শুনেছিলাম, তোমার স্বামী খুব বড় ব্যবসায়ী! মাসে দু একবার লন্ডন, সিঙ্গাপুর, মালেশিয়া যেতে হয়!
অনেক সম্পদের মালিকও নাকি হয়েছে! তোমার বাবা তার জীবনে এই একটা ভালো কাজই করে গেছে।
অনেক সম্পদের মালিকও নাকি হয়েছে! তোমার বাবা তার জীবনে এই একটা ভালো কাজই করে গেছে।
- যদি বলি, এটাই অভিশাপ আমার জীবনের!
- তা কেন বলবে! সে চেয়েছিলো, তার মেয়ে ভালো থাকুক। পৃথিবীর সব বাবাই তো এটা চায়।
- অথচ, তার মেয়ে ভালো নেই।
- ভালো থাকাটা নিজের কাছে, লতা। পৃথিবীতে সবকিছুই নিজের উপর নির্ভর করে।
- সব সময় এমন কবি কবি কথা বলো না তো, অনীল! ভাল্লাগেনা!
জীবন কবিতার মতো হয়না!
জীবন কবিতার মতো হয়না!
- একই সাথে দুজন মানুষ একই ছাদের নিচে আছো, অথচ ভালোবাসতেই পারোনি এখনো?
- একই ছাদের নিচে থাকলেই তো ভালোবাসা যায়না, অনীল!
অভ্যাস, দায়িত্ববোধ, বাধ্যবাধকতা আর প্রেম এক জিনিস না।
এই যে তুমি একটা সময় আমার চোখের দিকে তাকিয়ে মুগ্ধ হতে, এটাই প্রেম!
কত বছর হয়ে গেলো, কেউ বলেনা " তোমার চোখে এক অদ্ভুত সূর্যাস্ত দেখা যায়"!
অভ্যাস, দায়িত্ববোধ, বাধ্যবাধকতা আর প্রেম এক জিনিস না।
এই যে তুমি একটা সময় আমার চোখের দিকে তাকিয়ে মুগ্ধ হতে, এটাই প্রেম!
কত বছর হয়ে গেলো, কেউ বলেনা " তোমার চোখে এক অদ্ভুত সূর্যাস্ত দেখা যায়"!
- পুরানো কথা ভুলোনি এখনো?
- কেউ ভুলাতে পারেনি যে।
- তার ভেতর আমাকে খুজলে তো হবেনা।
- বিশ্বাস করো, খুজিনা একদম। তবুও, মনে পরে যায়। মনে পরে,আমার আঙুল ধরে তোমার খেলা করার বাচ্চাদের মতো আচরন।
তার সাথে তো আমার সবই হয়! সব ছুয়ে দেখে! শুধু ভালোবাসা নিয়ে আঙুল ছুয়ে দেখে না!
আচ্ছা, বাদ দাও!
আমি তোমার জন্য একটা চাকরি ঠিক করেছি! আমার অফিসেই! কাজটা লেখালেখির! তুমি এনজয় করবে!
তার সাথে তো আমার সবই হয়! সব ছুয়ে দেখে! শুধু ভালোবাসা নিয়ে আঙুল ছুয়ে দেখে না!
আচ্ছা, বাদ দাও!
আমি তোমার জন্য একটা চাকরি ঠিক করেছি! আমার অফিসেই! কাজটা লেখালেখির! তুমি এনজয় করবে!
- আমাকে দিয়ে ওসব চাকরি হবেনা। আর তোমার অফিসে তো আরো না!
- এত অভিমান জমিয়ে রেখেছো?
- অভিমান নয়, লতা! ভালোবাসা জমিয়ে রেখেছি!
- তাহলে, কাছে আসতে সমস্যা কোথায়!
- ভালোবাসা দূর থেকেই সুন্দর! কাছে গেলে,আগ্রহ থাকেনা!
- একসময় তো কাছে থাকলেও আগ্রহ ছিল তোমার।
- একসময় বদলে যায়, লতা! তখন অধিকার ছিল! এখন নেই!
অধিকারহীন কাছে আসা দূরত্ব বাড়িয়ে দেয়!
অধিকারহীন কাছে আসা দূরত্ব বাড়িয়ে দেয়!
- এভাবেই কাটিয়ে দিবে জীবন?
- বেশ ভালোই তো আছি!
- বিয়েটাও করলে না!
- ছন্নছাড়া জীবন কেউ গুছিয়ে দিবে, এটা ভালো লাগেনা আমার।
- এভাবে কি বাঁচা যায় নাকি?
- এই যে দিব্যি বেঁচে আছি। বিয়ে করার পর যদি তাকে ভালোই না বাসতে পারি, তবে সে ও তো তোমার মতোই সংসার নামক অভ্যাসে ভালো থাকবেনা।
- তবুও জানো তো, জীবনে একটা মানুষ খুব লাগে! কারো বুকের উপর মাথা রেখে সিকিউর ফিল করার প্রয়োজনবোধ হয়।
- কোন কোন বুকের উপর মাথা রাখলেও একাকিত্ব কমেনা।
- ওই যে, সেখানে ভালোবাসা নেই।
আচ্ছা, তোমার কখনো নিজেকে নিঃসঙ্গ লাগেনা?
আচ্ছা, তোমার কখনো নিজেকে নিঃসঙ্গ লাগেনা?
- নিঃসঙ্গতা তৈরী করি। নিঃসঙ্গতাই কবিদের খাদ্য! নিঃসঙ্গ না লাগলেই বরং অস্থিরতা বেড়ে যায়!
- আমার কথা মনে পরে কখনো?
- নাহ!
- একদম নাহ?
- তোমার কথা মনে পরে না। কারন, তোমাকে কখনো ভুলিনি, যে নতুন করে মনে পরতে হবে।
- এত বছরেও ভুলোনি কেন?
- কারন, তুমিই আমার নিঃসঙ্গতা! নিঃসঙ্গতাকে ভুলা যায়না।
- এতটা একাকিত্বও ভালো না।
- একাকিত্বের সাথে সঙ্গমে বেঁচে থাকার মাঝে, সুখের মতো ব্যথা থাকে!
তুমি আমার একাকিত্ব! তুমিই আমার সুখের মতন ব্যথা!
তুমি আমার একাকিত্ব! তুমিই আমার সুখের মতন ব্যথা!
- আমি যাচ্ছি! নিজের যত্ন নিও, অনীল!
- মাধবীলতা!
- হুম অনীল, বলো!
- নাহ, কিছুনা!
- নাম ধরে ডাকলে যে?
- ও কিছুনা, এমনিই।
- আচ্ছা!
- ভালো থেকো, লতা!
Comments
Post a Comment