লুঙ্গি পরে প্রেমিকার বাসার সামনে যেয়ে ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি।
আমি তখন দশম শ্রেনীর ছাত্র! প্রেমিকা বলতে, মেয়েটাকে পছন্দ করতাম।
স্কুলের ক্লাস সিক্সে নতুন ভর্তি হওয়া সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে। মানে, আমার চোখে তারচেয়ে বেশি সুন্দরী আর কেউ ছিল না।
মূলত, পিরিতের পেত্নিও সুন্দর টাইপ ব্যপার।
আমার বাসা থেকে ৫ মিনিট দূরেই একটা ছোট্ট বাস স্ট্যান্ড। সেখান থেকে ১০০ মিটার দূরেই তাদের বাসা। মেয়ে ক্লাস সিক্সে পড়লেও তার শারিরিক গঠন ছিল নবম দশম শ্রেনীর মেয়েদের মতোই।
তখন কিশোর মন, আবেগের নৌকা ভেসে চলে স্বপ্নের সমুদ্রে।
কিছুতেই মাথা থেকে তার চিন্তা যেন সরছেনা। যেহেতু স্কুল জীবন আমার গ্রামেই কেটেছে, সুতরাং গ্রামের নিয়ম কানুন মতো বাসা থেকে লুঙ্গি পরেই বের হইতাম। বাসা থেকে বের হয়ে সেই মেয়ের বাসার সামনে যেয়ে দাঁড়ায় থাকতাম!
তো একদিন মেয়ে বাসা থেকে বের হয়ে দেখলো আমি একটা লুঙ্গি আর একটা ৪৫ টাকা দামী গোল গলার হলুদ গেঞ্জি গায়ে দিয়ে তার বাসার সামনে দাঁড়ায় আছি!
ও সামনে আসতেই আমার বুকের কলিজা গলায় চলে আসলো, মাথা ঝিমঝিম করে, পা কাপে, বুকের ভেতর ডিবডিব শব্দ শোনা যায়, মেরুদন্ডের মাঝ বরাবর দিয়ে একটা চিকন ঘামের স্রোত পিঠ বেয়ে লুঙ্গির ভেতর দিয়ে পা ছুয়ে মাটিতে নেমে গেলো!
তারপর ও সামনে এসে বললো, স্মার্ট লাগতেছে!
এরপর ৩ রাত ঘুমাইতে পারিনি!
আনন্দে! প্রেমে! আবেগে! উচ্ছাসে!
যাইহোক গল্পটা এজন্য বললাম যাতে আমার আচরন এবং সে সময়ের চিন্তা শক্তি কিছুটা অনুমান করা যায়!
তখন আমি সহজ সরল সাদাসিধে অল্প জ্ঞান সম্পন্ন একজন উঠতি বয়সী কিশোর!
বাইরের পৃথিবী সম্পর্কে আমার ধারনা কম। বুকের ভেতর কিডনি পাকস্থলি কি ফুসফুসের জায়গায় সমস্তটাই আবেগের হৃদপিন্ডে পরিপূর্ন!
গ্রামে বড় হওয়ার কারনে না জানি টেকনোলজি সম্পর্কে কিছু, না বুঝি পৃথিবীর মারপ্যাচ!
এতকিছু বুঝার কখনো প্রয়োজন হয়নি! বিকেলে বাসা থেকে বের হয়ে ২ টাকার বাদাম কিনে খেলার মাঠে যেয়ে বসে থাকতাম।
সবাই খেলতো, আমি দেখতাম। নিজে খেলাধূলা করার আগ্রহ আমার তেমন ছিলনা কখনো।
মাঝে মাঝে বাসার পাশের মাঠে ভলিবল খেলতাম। আমি দেখতে ছোট কিন্তু ভলিবলটা ভালোই খেলতে পারতাম।
আমাকে বলা হইতো পকেট ম্যান। মানে যে লম্বা প্লেয়ার একদম নেটের কাছে দাঁড়িয়ে প্রচুর শক্তি নিয়ে অন্যপাশে বলকে চাপ মারে৷ তার পকেটে খেলতাম। বিপরীত পাশ থেকে যখন চাপ মারার অভিনয় করে ডজ দেওয়া হতো, তখন আমি পকেটের ভেতর থেকে সেই বল উঠায় ফেলতাম।
এলাকার বড় বড় প্লেয়াররা আমার প্রসংশা করতো! মানুষের ডজ দেওয়ার সাইকোলজিটা আমি আসলে সেখান থেকেই শিখেছি!
এলাকায় তখন কম্পিউটার বলতে কোন জিনিস নাই। তবে, পৃথিবীতে যে কম্পিউটার আছে এবং বড়লোকের ছেলে মেয়েরা এটা ব্যবহার করে এই সম্পর্কে আমি শুনেছি মানুষের কাছে!
ইন্টারনেট, ফেসবুক, ইউটিউব এগুলো তখনো গ্রামের মানুষের নাগালের বাইরে।
আমার মোবাইল ফোন তখন ১১০০ মডেলের নোকিয়া। বন্ধু বান্ধবরে গর্ব করে বলতাম, দিস ইজ মেড ইন হাঙ্গেরি!
হোয়াটএভার, ক্লাস টেইনে পড়া একটা ছেলের হাতে মোবাইল ফোন থাকাটাই তো একটা বিশাল ব্যপার! ফোন কখনো হাত থেকে পকেটে রাখতাম না।
এলাকার মুরব্বিদের সালাম দেওয়ার সময় ডান হাতে ফোন ধরে হাত কপালে তুলে সালাম দিতাম, যাতে সে দ্যাখে আমার একটা মোবাইল ফোন আছে!
এটাতে আমি প্রচুর শান্তি পাইতাম। নিজেরে খুব বড়লোক ঘরের সন্তান মনে হইতো, যদিও বাসায় যেয়ে দেখতাম, এখনো রান্না হয়নাই।
রান্না হইলেও মা শাক পাতা রান্না করে রাখছে, যেই শাক পাতায় ঠিক মতো তৈল দেওয়া হয়নাই!
একটা ডিম ভাজলে ৫ টুকরা করা হইতো। ঘরের ৫ জন সদস্য এক টুকরা করে খেয়ে তৃপ্তির ঢেকুর দিতাম।
যখন মানুষের কিছুই থাকেনা, তখন অল্পতে তৃপ্তির ঢেকুর উঠে।
আর যার অনেক কিছু আছে, সে কখনো তৃপ্তির ঢেকুর তুলতে পারেনা!
এরপর ঢাকায় আসলাম!
গ্রাম থেকে কামলা খাটা পোলাপাইন শহরে আসলে বুঝে উঠতে পারেনা, কি রাইখা কি করবে!
প্রথম মেসে উঠলাম জিগাতলায়!
বড় বড় বিল্ডিং আর আলোকসজ্জায় আমার ভিমড়ি খাওয়ার মতো অবস্থা!
ঢাকা শহরে কিছুই ঠিক মতো চিনি না। এক রাস্তা দিয়ে ঢুকলে আরেক রাস্তায় যেয়ে মনে হয়, বাসায় ফিরতে পারবো তো?
বাসা থেকে একটু দূরেই রাইফেলস স্কয়ার! একদিন এই মার্কেটে গেলাম! আমার গায়ে একটা কালো রংয়ের স্পোর্টস ট্রাউজার আর গোল গলার টি-শার্ট!
মার্কেটে যেয়ে নিজেরে এত'টা ক্ষ্যাত লাগতেছিলো যে, বের হইয়া যাইতে ইচ্ছে হচ্ছে!
তবুও বাইরে থেকে দেখলাম, একটা ক্যাপসুলের মতো দেখতে লিফট।
নিচে থেকে উপরে যায় আবার উপর থেকে নিচে আসে। ওইটাতে যেয়ে উঠলাম।
লিফটে উঠার পর দরজা বন্ধ হয়ে গেলো। কোন লিফট ম্যানও নাই।
কি করবো বুঝতেছিনা। তারপরও জীবনের ঝুকি নিয়ে লিফটের বাটনে চাপ দিলাম। চাপ দিলাম ৬ লেখা ডিজিটে।
এরপর লিফট উপরে উঠলো। দরজা খোলার আগে একটা মেয়ে কন্ঠ বইলা উঠলো " sixth floor" আমি মেয়েটারে খুঁজি।
কোথাও কোন মেয়ে নাই। জীবনের প্রথমবার লিফটে উঠার আনন্দের চেয়ে টেনশনটাই বেশি ছিল!
কলেজে দুইদিন ক্লাস করার পর এক শহরের ছেলে আইসা বললো, সিগারেট খাও?
না করলে ইজ্জত নাও থাকতে পারে, এই ভয়ে বললাম হ্যা খাই।
তারপর কলেজ অডিটোরিয়ামের পেছনে যেয়ে সিগারেট ধরাইলাম। গোল্ডলিফ সিগারেট। এর আগে আমি কোনদিন সিগারেট খাই নাই। কাশতে কাশতে সিগারেট শেষ করলাম।
এরপর কলেজ যাই প্রতিদিন সকাল ৭ টায়। বয়েজ কলেজ, কোন মেয়ে নাই।
কলেজ থেকে আসার সময় সিটি কলেজের সুন্দরী মেয়ে দেখতাম, তাদের সাথে কত ক্লোজ সম্পর্কে স্মার্ট স্মার্ট ছেলে।
এই শহরে আমার কোন মেয়ে বান্ধবী নাই! রাত হইলে একা লাগে! যেই মেসে থাকতাম, সেই মেসে আমিই সবার ছোট। ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি বলে, মেসে থাকার ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারের পোলাদের ছোট ভাই ছিলাম।
সকাল বেলায় সবাই ৫ টাকার রুটি খাইতো। মাঝখানে মোরব্বা দেওয়া।
সকাল হইলে আমার নিচে যেয়ে সবার জন্য রুটি এনে দিতে হইতো।
যাইহোক, ওইসব কোন সমস্যা না। নতুন জায়গায় গেলে অনেক কিছুই করা লাগে জীবনে।
তো একদিন কলেজের এক বন্ধু বললো-
পাশেই গ্যালাক্সি! যাইবি?
আমি বললাম-
গ্যালাক্সি কি?
ও বললো- আরে ব্যাটা মদের বার। চল একদিন মদ খেয়ে আসি।
আমি কোনদিন মদ দেখি নাই। গ্রামের বন্ধুদের দেখতাম ঝাকি খায়। ঝাকি হইলো, অনেক রকমের ঘুমের ঔষুধ, ঠান্ডার সিরাপ আর সেভেন আপ মিলাইয়া ঝাকি দিয়া খাইতো।
তারপর একটু অস্বাভাবিক আচরন করতো। তো, আমার মনে হইলো মদ না খাই, যেয়ে তো দেখতে পারি। গেলাম গ্যালাক্সিতে। কি সুন্দর লবি! টিভি, সোফা, হালকা ডিম লাইটের আলো।
কাউন্টারের সামনে বইসা এক প্যাগ জিন আর এক প্যাগ হুইস্কি নিলাম। ৮০ টাকা প্যাগ! তবুও, জীবনে আর কি আছে, ১৬০ টাকার মদ নিয়া বসলাম।
বন্ধু দেখায় দিলো, কিভাবে গিলতে হয়! প্রথম প্যাগ গিললাম, কান দিয়া নাক দিয়া গরম ধূয়া বের হইতেছে! ভাবলাম, এই জন্যই মনে হয় বাংলা সিনেমায় নায়করা মদ খায়!
যা কষ্ট হয় গিলতে, এই কষ্টে প্রেমিকা যাওয়ার কষ্ট না ভুইলা উপায় নাই।
পাশের এক লোকরে দেখি, মদের সাথে চিকেন ফ্রাই নিয়া বসছে!
শালা মদ খাবি খা, চিকেন ফ্রাই খাস কেন?
কষ্টের জন্যই যখন মদ খাবি, তাইলে মদের কষ্ট কমানোর জন্য চিকেন লাগে?
মদ খেয়ে বাইরে বের হইলাম। দুই প্যাগে কিছুই হয়না, তবুও বন্ধুরে দেখানোর জন্য মাতাল মাতাল ভাব নিলাম!
বাসায় এসে ঘুম দিলাম। জীবনে প্রথমবার মদ খাওয়ার অভিজ্ঞতা যেমনই হোক না কেন, মদের স্বাদ যে জঘন্য এই বিষয়ে আমার আর কোন সন্দেহ রইলো না।
যাইহোক, লেখা বড় হইয়া যাচ্ছে! হইলে হোক! পড়লে পড়েন, না পড়লে নাই!
খুব লিখতে মন চাইতেছে আজকে! একটু লিখি!
কলেজে প্রথমদিন যে ছেলেটার সাথে পরিচয় হইছিলো, সে বড় হইছে ঢাকাতে!
প্রথমদিন থেকে তারে আমার সহ্য হয়না। এমনিই সহ্য হয়না। হুদাই সহ্য হয়না।
যদিও কয়েকদিন পর কলেজে ও ই আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধ হয়েছিলো।
এই ছেলেটার নাম সুমন! সুমন আমারে একটু একটু করে এই শহর চিনিয়েছিলো। কোনদিন সাভার, নবীনগর, জাদুঘর, জাহাঙ্গীরনগর, শিশুপার্ক, রমনা, সেগুনাবাগিচা, মহাখালি, ফার্মগেট, গুলশান, একটু একটু করে সব জায়গায় নিয়ে গেছে।
আমার সাথে মেসে এসে আড্ডা দিছে। ধানমন্ডি ওর যত ফ্রেন্ড আছে, সবার সাথে পরিচয় করায় দিছে। আমি অল্প অল্প করে পরিচিত মানুষ পাইতেছিলাম। ৬ মাসের মধ্যে শহর সম্পর্কে আমার ধারনা হইলো! রাস্তাঘাট চিনলাম! চায়ের দোকানদারের সাথে পরিচয় হইলো!
বন্ধুদের মেয়ে বান্ধবীদের সাথে পরিচয় হইলো! অনেকের প্রেমিকা আছে, আমার কোন প্রেমিকা ছিল না।
সুমন একদিন একটা সাইবার ক্যাফে থেকে আমারে আমার ফেসবুক আইডি খুলে দেয়।
আমি জানতাম না, এইটা আসলে কিভাবে চালাইতে হয়। কম্পিউটারের মাউস ধরলে কার্সার নিবো একদিকে, চলে যায় আরেকদিকে।
অভ্যাস নেই তো।
মাঝে মাঝে একাই সাইবার ক্যাফে যেয়ে এক ঘন্টার জন্য বসি।
ডেস্কের সামনে লেখা, পর্ন সাইটে প্রবেশ নিষেধ! আমার শখ হইলো পর্ন সাইটে কি আছে, দেখবো!
যদিও গ্রামে ক্যাসেটের দোকান থেকে ইভেইলডেড মুভির ক্যাসেট এনে ডিস্ক চেঞ্জ করে অশ্লীল ডিস্কটা রেখে দিছিলাম, বন্ধু বান্ধব মিলে মাঝে মাঝে ওইটাই দেখতাম।
পর্ন কোন সাইটে থাকে আমি জানি না। গুগলে porn লিখে সার্চ দিলাম।
পর্ন বানান দেখলাম ডেস্কের উপরে লিখে রাখা porn থেকে!
আসলো, দেখলাম। অবাক হইলাম। কি খাচ্চইরা কাজ কাম!
তারপর থেকে প্রায়ই সাইবার ক্যাফে যাই, ফেসবুকে hi frnd kamon aco লিখে স্ট্যাটাস দেই। যদিও তখন সুমনই আমার একমাত্র ফেসবুক ফ্রেন্ড ছিল!
এরপর কলেজ জীবন শেষ করলাম। আমার জীবনে অর্থনৈতিক সমস্যা ছিল অনেক। এর আগেও অনেক লিখায় লিখেছি।
আজ আর অর্থনৈতিক দৈন্যতার কথা লিখবো না। স্ট্রাগলিং এর গল্প বলবো না।
ভার্সিটি কোচিংয়ে ভর্তি হইলাম। নতুন বন্ধু বানাইলাম। একদিন এক মেয়ে দেইখা তার সাথে কথা বলার চেষ্টা কইরা সফল হইলাম। ফোন নাম্বার নিলাম।
তারপর বহুত চড়াই উৎরাই পার হয়ে একদিন প্রেম হইলো! এই শহরে এইটাই আমার প্রথম প্রেম এবং এখন পর্যন্ত সেই মেয়েই আমার প্রধান প্রাক্তন। যদিও এরপর আমার আরো অনেক প্রেমই হয়েছে, তবুও বুকের ভেতর গেঁথে যাওয়া প্রেম আসলে ওইটাই ছিল!
৪ বছর সম্পর্ক ছিল! তারপর সে হারায় যায়! এরপর তার বিয়ে হয়!
আমার সাথে আবার যোগাযোগ হয়! এখনো কথা হয় মাঝে মাঝে!
যাইহোক, তার সাথে আমার অনেক গল্প, অনেক স্মৃতি, অনেক অনেক হিসেব নিকেশ আছে!
সে চলে যাওয়ার পর অনেকদিন আর প্রেম হয়নি! ইচ্ছেও হয়নি!
ঢাকাতে ৫ বছর কেটে গ্যাছে! অনেক মানুষকে চিনেছি! দু একটা টিউশনি করতাম, সেই টাকা দিয়েই নিজের খরচ চালাতাম!
একদিন টিউশনি ছেড়ে দিয়ে বেশি টাকা উপার্জনের জন্য ব্যবসা বানিজ্য করার চিন্তা করলাম! টাকা পয়শা ইনকাম করলাম। ফিক্সড কিছু না। তবুও মাসে ভালো টাকাই আসতো!
বাসায় টাকা পাঠাতে পারতাম, নিজেও চলতে পারতাম।
তারপর একদিন ফরেক্স ট্রেডিং এর কাজ করার ইচ্ছা জাগলো!
ব্রোকারের কাছে যেয়ে তথ্য নিলাম। বাসায় সারারাত জেগে এটা সম্পর্কে স্টাডি করতাম।
গ্রামের সেই লুঙ্গি পরে প্রেমিকার সামনে যেয়ে দাঁড়ানো ছেলেটা শিখতে শুরু করলো কোন দেশের কারেন্সির সাথে কোন দেশের কারেন্সিকে এক্সচেঞ্জ করে টাকা কামানো যায়।
কম্পিউটারের মাউস ধরতে না জানা ছেলেটা, টেকনিক্যাল এনালাইসিস, ফান্ডামেন্টাল এনালাইসিস করতে শিখলো!
সে জানতে শিখলো, হোয়াট ইজ ফিবোনাচ্ছি রিট্রেসমেন্ট! হাউ মাচ লিবার্টি মানি ওয়ান'স নিড টু ট্রেড ইন ফরেক্স মার্কেট!
এখান থেকে আবার সুইচ করে অন্য চাকরিতে ঢুকলাম। এই চাকরির বয়স ৪ বছর!
এই ৪ বছরে আমি এত এত মানুষের সাথে মেশার সুযোগ পেয়েছি, এত এত বড় জায়গায় যেতে পেরেছি, এত এত ভিআইপি ক্লায়েন্ট ডিল করেছি যে, আমার কলেজ লাইফের ঢাকায় থাকার বন্ধুরা সেখানে পৌছাতে আরো এক যুগ লেগে যেতে পারে।
আমি গর্ব করছিনা, তবুও আমি অনেক এগিয়েছি শহুরে মানুষের এগিয়ে চলার তুলনায়!
আমি এগিয়েছি চিন্তায়, বুদ্ধিতে, পরিচিতি!
আমি অনেকের চেয়ে বেশি এগিয়েছি অর্থনৈতিক ভাবে!
আমার সবচেয়ে বড় অর্জন বলতে আমি বুঝি, অনেক অনেক মানুষের সাথে আমার পরিচয়!
এটা নিতান্তই সহজ কিছু না।
হয়তো সহজ, তবে আমার অর্জন আসলে অনেক অনেক মানুষের সাথে ভালো সম্পর্ক বজায় রেখে চলতে পারাটা।
জীবনের গল্প লিখতে গেলে, শেষ করা যায়না!
গল্পের ভেতরও অনেক গল্প থাকে! আমি ১০ বছর ঢাকাতে!
লুঙ্গি পড়ে প্রেমিকাকে ইমপ্রেস যেমন করেছি, স্যুট পড়েও করেছি!
সময় মানুষকে বদলে দেয়! সময় মানুষকে বড় করে! সময় মানুষকে ম্যাচিউর করে তোলে!
এই যে আমি ১০ বছর এই শহরে, এটা কম সময় না।
তবুও আমার মনে পড়ে, সেই তো সেদিন ৫০ টাকা দামী দুই বেল্টের স্যান্ডেল পায়ে দিয়ে ঢাকায় এসেছিলাম।
আমার মনে পড়ে, সেই তো সেদিন ৫ টাকার ঝালমুড়ি খাওয়ার শখ পূরণ হয়নি!
আমার মনে পড়ে, এই শহরে একসময় আমার কোন পরিচিত মানুষ ছিল না।
এই যে ১০ বছর আমি ঢাকাতে!
কত কত গল্পের ভিড়ে হারিয়েছি বহুবার! কত অসুখ বুকে জমিয়ে এগিয়ে গিয়েছি!
কত মানুষের পাত্তাহীনতায় ঘুরে দাঁড়িয়েছি!
এই তো মাত্র ১০ বছরেই কত বদলে গেছি! বদলে গেছি মানুষের স্মৃতিতে, অনিদ্রার গল্পে, ডিপ্রেশনে!
১০ বছরে বদলে গেছি, মফস্বল শহরের মতো! যেমন করে মফস্বল শহর বদলে যায় বড় বড় অট্টালিকার ভিড়ে!
এই ১০ বছরে কত কি দেখেছি! কত মানুষ যত্ন করে ব্যথা দিয়ে চলে গ্যাছে!
বিশ্বাস করিয়ে ঠকিয়েছে! কত কত মানুষ তাকিয়ে ছিল রং জ্বলে যাওয়া শার্টের দিকে!
আমার এখনো সব মনে পড়ে!
মনে পড়ে, দু প্যাগ মদ খেলে কেউ মাতাল হয়না, তবুও এই শহরে কত মানুষ রোজ রোজ মাতালের অভিনয় করে যায়!
আমার মনে পড়ে,
সিগারেটের অভ্যাস নেই তবুও, সিগারেট খেয়ে নিজের জায়গা বানিয়ে নেওয়ার গল্পে আমিই নায়ক আমিই ভিলেন ছিলাম!
আমার মনে পড়ে, প্রেমিকারা বুকের উপর গোলাপ ছিটিয়ে সেটাকে কার্পেট বানিয়ে হেটে যায় সিংহাসনে!
এই যে ১০ বছরে আমি প্রতারিত হতে হতে প্রতারণা শিখে গেছি!
ঠকতে ঠকতে ঠকাতে শিখে গেছি! ব্যথা পেতে পেতে ব্যথা দিতে শিখে গেছি!
১০ বছর অনেক সময় হয়তো না, তবুও ১০ বছর একেবারেই কম সময় না!
১০ বছরে আমি বদলেছি খুব, ভীষন বদলেছি!
পৃথিবী বদলায়নি!
আমাকে বদলে যেতে হয়েছিলো প্রয়োজনে!
আমাকে বদলাতে হয়েছে, জীবিকার তাগিদে!
আমার জানতে ইচ্ছে হয়, আমার সেই প্রেমিকাটি এখন কেমন আছে? কোথায় আছে?
যার জন্য আমি লুঙ্গি আর হলুদ রংয়ের টি-শার্ট পরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতাম!
সে ও কি আমার মতোই বদলেছে খুব, নাকি একদিন পথে দেখা হয়ে গেলে ভুল করে বলে ফেলবে, ''খুব স্মার্ট লাগছে"!!!!

Comments

Popular posts from this blog