মানুষের ভালো থাকার শত ভাগ কার্যকরী নির্দিষ্ট কোন নিয়ম নেই।
একমাত্র, জীবনের সমস্ত খারাপ থাকার কারনগুলোকে পাত্তা দেওয়া বন্ধ করতে পারলেই মানুষ ভালো থাকতে পারবে।
আমাদের একটা বড় সমস্যা হলো, আমরা প্রত্যাশাটা বেশি করে ফেলি।
ভালো থাকতে হলে, ড্যামকেয়ার হতে হয়। কোন কিছু পেলে ভালো, না পেলে সমস্যা নাই।
ধরে নিতে হবে, পৃথিবীর সমস্তকিছু আমার মনের মতো হবেনা। যদি কোন কিছু মনের মতো হয়ে যায়, তাহলে এটা বোনাস!
আমরা কাউকে ভালোবাসার আগেই তার ভালোবাসা পাওয়ার ব্যপারটা মস্তিষ্কে প্রোগ্রামিং করে ফেলি।
তারপর তার অবহেলা পেলে, আমরা কষ্ট পাই। খেতে পারিনা, ঘুমাতে পারিনা, কোথাও মনোযোগ দিতে পারিনা।
অথচ, ব্যপারটা অন্যরকম হওয়ার কথা ছিল। কাউকে ভালোবাসতে শুরু করলে, এটা মাথায় রাখতে হবে যে তার কাছ থেকে ভালোবাসা পেতেও পারি, নাও পেতে পারি।
ভালোবাসা ট্রানজেকশনাল হয়ে গেলেই সমস্যা বেড়ে যায়।
ভালোবাসার বিনিময়ে ভালোবাসা চাইতে নেই। যে ভালোবাসার পর বিনিময় চায়না, তার ভালোবাসায় পবিত্রতা থাকে।
কাউকে বিশ্বাস করার আগে এটা মেনে নিতে শিখতে হবে, কেউ আমার বিশ্বাস ভাংবেনা, এটার কোন লজিক নেই।
মানুষ অন্য একটা মানুষের বিশ্বাসকে প্রশ্রয় দেয়, বিশ্বাস ভাঙার আনন্দটা পাওয়ার জন্যই। কাউকে বিশ্বাস করলাম, তারপর তার কাছ থেকে প্রতারিত হওয়ার পর মরে যাওয়ার মতো কিছু হয়ে যায়না। এখন, কেউ যদি আপনার বিশ্বাস রক্ষা করে, তাহলে ইউ আর ভেরি লাকি। এটা আরেকটা বোনাস পয়েন্ট।
আপনি পৃথিবীর সমস্তকিছু করুন, তাতে প্রত্যাশার পরিমানটা একটু কমিয়ে রাখুন।
ভালোবেসে বিছানায় যাওয়ার আগে, আপনি যদি বলেন "আমাকে বিয়ে করবা তো?" তাহলে আপনি ভুল করলেন।
শোয়ার প্রয়োজনে শুবেন। বিয়ে করার প্রত্যাশা নিয়ে না।
এরপর বিয়েটা না হলে, যাতে বলতে হয়না "ও আমাকে ঠকিয়েছে!"
আপনি নিজেই ঠকেছেন। শোয়ার আগে এটা মাথায় আনুন, বিয়ে হইলে ভালো, না হইলে নাই।
বেশি কনফিউজড হলে, অপেক্ষা করুন। তারপর বিয়ে করে শুতে যান। অন্তত দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত হতে হবেনা।
আপনি যা কিছুই করুন না কেন, নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে করুন।
ধরে নিন, পাবেন না। তবুও সবটুকু দিন।
আমি এক ছেলেকে চিনি, যে ১৭ টা চাকরির ইন্টারভিউতে ফেইল করার পর ১৮ তম ইন্টারভিউয়ের আগের দিন নিজের জুতাটা পলিশ করে এনেছে। শার্টটা আয়রন করে রেখেছে। সে জানে, তার আসলে চাকরি হবেনা। তবুও, গ্যাপ রাখা যাবেনা। চাকরি হবেনা, এটাই সত্যি। চাকরিটা হয়ে গেলে, বোনাস পয়েন্ট।
আমি বাস্তব জীবনে প্রচন্ড ড্যামকেয়ার স্বভাবের! আমি যখন কাউকে প্রচন্ড ভালোবেসে ফেলি, তখন ধরে নিই তার সাথে সারাজীবন আমার সুসম্পর্ক থাকতে নাও পারে।
তার কাছ থেকে ভালোবাসা আমি পেতে নাও পারি। আমি যখন কাউকে আমার জীবনে চাই, তখন ধরে নিই, আমার লাইফে তার রয়ে যাওয়াটা বাধ্যতামূলক না।
ভালো লাগছেনা বলে আঙুল ছেড়ে চলে যাওয়ার অধিকারও তার আছে।
এমন অনেক সময়ই হয়েছে যে, পকেটে টাকা নেই। অথচ,
প্রয়োজনটা বাড়াবাড়ি রকমের। কি করবো কিছুই বুঝতে পারিনা, তখন ড্যামকেয়ার হয়ে যায়। নিজে নিজে বলি, যা হওয়ার হবে।
আমি যে চাকরিটা করি, এটাকে পূজা করে করিনা। চাকরি আছে, করছি। চাকরি চলে গেলে, করবোনা। চাকরিকে জোর করে দখলে রাখার চেষ্টাটা আমি কখনো করিনা।
আমাকে পছন্দ হচ্ছেনা, না করে দিন। চাকরি বাঁচানোর চেষ্টা করে কেউ চাকরিটা বাঁচাতে পারেনা। যে জিনিস নিয়ে মানুষের ভয় থাকে, মানুষ সে জিনিসেই আটকে যায়।
আমার যখন কোন কারনে মন খারাপ হয়, তখন নিজে নিজে বিরবির করে বলতে থাকি, "আরে ধুর, এইসব জিনিসের জন্য মন খারাপ হলে চলে, বাল!"
আমার এই ড্যামকেয়ার স্বভাবটাই আমাকে ভালো থাকতে সাহায্য করে।
আর আমি সবসময় বেশ ভালো থাকিও। দুঃখ কষ্ট যন্ত্রনা, হতাশা, অপ্রাপ্তি জীবনে আসবেই, তবে এসবকে পাত্তা দিলেই এরা বড় হয়ে উঠে।
ভালো থাকার চেষ্টা করে কেউ ভালো থাকতে পারেনা। ভালো থাকতে হয়, খারাপ থাকাকে পাত্তা না দিয়ে।
কারো অবহেলায় মন খারাপ করার কিছু নেই, বরং মেনে নিতে শিখতে হবে।
আমাকে ভালো রাখার দায়িত্বটা নিয়ে কেউ পৃথিবীতে আসেনি।
আমাকে নিয়ে ভাববার জন্য মানুষ তার সময় বিনিয়োগ করবেনা।
এইগুলো মেনে নেওয়ার মানসিকতা ব্রেইনে সেট করতে হবে।
ভালো থাকা কি?
ভালো থাকা কিছুই না। কেউ কেউ সুইজারল্যান্ডে ট্যুরে যেতে পারছেনা বলে ভালো নেই।
কারো কারো দুটো হাতের একটাও হাত না থাকার কারনে ভালো নেই।
কেউ মোবাইল ফোনটা ভেঙে যাওয়ার কারনে ভালো নেই, কারো ফোনে কথা বলার একটা মানুষ নেই বলে ভালো নেই।
আমি তো রোজ সন্ধ্যায় অফিস শেষে বিআরটিসি বাসে উঠার মতো একটু স্পেস না পেলে ভালো থাকিনা কিছুক্ষন। তারপর এই খারাপ থাকাকে পাত্তা না দিয়ে হাটা শুরু করি।
একটু কষ্ট হয়, তবুও দিনশেষে ঠিকই গন্তব্যে পৌছে যাই।
জীবনের সমস্ত খারাপ থাকাটাই এমন। কোথাও থেমে থাকা যাবেনা।
চলতে শুরু করলে, গন্তব্য আসবেই। শুধু পথে হেটে যাওয়াটাই একটু কষ্টের।
ভালো থাকতে যেও না, বরং খারাপ থাকাটাকে পাত্তা দেওয়া বন্ধ করে দাও।
জীবন চলবেই জীবনের নিয়মে।

Comments

Popular posts from this blog